Friday , March 29 2024

❤️? সিয়াম/রোজা কি❓❓

? আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ ?

❤️? সিয়াম/রোজা কি❓❓

✔️ শরীয়তের পরিভাষায় ‘সওম’ বা ‘সিয়াম’-এর অর্থ হল, ফজর উদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, স্ত্রী-সঙ্গম ইত্যাদি যাবতীয় রোযা নষ্টকারী কর্ম হতে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করা।(আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৩১০, তাযঃ ৯পৃঃ)

অবশ্য এই সংজ্ঞায় অসারতা ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকাও শামিল রয়েছে।

❤️ রোযার ফযীলত ↩️↩️

✔️ সাহ্ল বিন সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, জান্নাতের এক প্রবেশদ্বার রয়েছে, যার নাম ‘রাইয়ান।’ কিয়ামতের দিন ঐ দ্বার দিয়ে রোযাদারগণ প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া তাদের সাথে আর কেউই ঐ দ্বার দিয়ে প্রবেশ করবে না। বলা হবে, ‘কোথায় রোযাদারগণ?’ সুতরাং তারা ঐ দরজা দিয়ে (জান্নাতে) প্রবেশ করবে। অতঃপর যখন তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি প্রবেশ করবে, তখন সে দ্বার রুদ্ধ করা হবে। ফলে সে দ্বার দিয়ে আর কেউই প্রবেশ করতে পারবে না।’’(বুখারী১৮৯৬ নং, মুসলিম ১১৫২ নং, নাসাঈ, তিরমিযী)

✔️ আম্র বিন আবাসাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন মাত্র রোযা রাখবে সেই ব্যক্তি থেকে জাহান্নাম ১০০ বছরের পথ পরিমাণ দূরে সরে যাবে।’’(নাসাঈ, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৬৩৩০নং উকবাহ হতে,ত্বাবারানী কাবীর ও আওসাত্ব, সহীহ তারগীবঃ৯৭৫ নং)

✔️ উসমান বিন আবূল আস কর্তৃক বর্ণিত, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘রোযা হল দোযখ থেকে বাঁচার জন্য ঢালস্বরূপ; যেমন যুদ্ধের সময় নিজেকে রক্ষা করার জন্য তোমাদের ঢাল হয়ে থাকে।’’(আহমাদ, মুসনাদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৩৮৭৯নং)

❤️ বিনা ওযরে রোযা ত্যাগ করার সাজা ↩️↩️

✔️ ইমাম যাহাবী (রঃ) বলেন, ‘মুমিনদের নিকটে এ কথা স্থির-সিদ্ধান্ত যে, যে ব্যক্তি কোন রোগ ও ওজর না থাকা সত্ত্বেও রমাযানের রোযা ত্যাগ করে, সে ব্যক্তি একজন ব্যভিচারী ও মদ্যপায়ী থেকেও নিকৃষ্ট। বরং মুসলিমরা তার ইসলামে সন্দেহ পোষণ করে এবং ধারণা করে যে, সে একজন নাস্তিক ও নৈতিক শৈথিল্যপূর্ণ মানুষ।(মাজমূ’ ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়্যাহ ২৫/২২৫, আল-কাবায়ের, যাহাবী ৪৯পৃঃ, ফিকহুস সুন্নাহ ১/৩৮৪)

❤️ চাঁদ দেখে সিয়াম রাখুন ↩️↩️

✔️ মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে ঈদ কর। কিন্তু যদি আকাশে মেঘ থাকে, তাহলে গণনায় ৩০ পুরা করে নাও।’’(বুখারী, মুসলিম)

✔️ মুসলিম যে দেশে বাস করবে, সেই দেশেরই চাঁদ দেখা অনুযায়ী রোযা-ঈদ করবে।তাই যারা বাংলাদেশে থেকে সৌদি আরবের সাথে সিয়াম রাখে ও ঈদ করে তারা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে।

❤️ রমাযানের রোযা প্রত্যেক সাবালক, জ্ঞানসম্পন্ন, সামর্থ্যবান, গৃহবাসী (অমুসাফির), সুস্থ ও সকল বাধা থেকে মুক্ত মুসলিম নরনারীর উপর ফরয।

✔️ বৃদ্ধ ও স্থবির বা অথর্ব ব্যক্তি, যার শারীরিক ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে গেছে এবং দিনের দিন আরো খারাপের দিকে যেতে যেতে মরণের দিকে অগ্রসর হতে চলেছে, সে ব্যক্তির জন্য রোযা ফরয নয়। কষ্ট হলে সে রোযা রাখবে না।

✔️ অথর্ব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, যারা রোযা রাখতে সক্ষম নয়। তারা প্রত্যেক দিনের বদলে একটি করে মিসকীনকে খাদ্য দান করবে।(বুখারী)

✔️ গর্ভবতী অথবা দুগ্ধদাত্রী মহিলা রোযা রাখার দরুন যদি নিজেদের কষ্ট হয় অথবা তাদের শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা করে, তাহলে উভয়ের জন্য রোযা না রেখে যখন সহজ হবে অথবা ক্ষতির আশঙ্কা দূর হবে তখন রোযা কাযা করে নেওয়া বৈধ।(ইবনে উষাইমীন, ফাসিঃ ৫৯পৃঃ)

✔️ কোন মৃত্যু-কবলিত মানুষকে আগুন, পানি বা ধ্বংসস্ত্তপ থেকে বাঁচাতে যদি কোন রোযাদারকে রোযা ভাঙ্গতে হয় এবং সে ছাড়া অন্য কোন রোযাহীন লোক না পাওয়া যায়, তাহলে প্রাণ রক্ষার জন্য তার পক্ষে রোযা ভাঙ্গা ওয়াজেব। অবশ্য সে ঐ দিনটিকে পরে কাযা করতে বাধ্য।(ফাতাওয়া শায়খ ইবনে উষাইমীন ৬০পৃঃ)

✔️ মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মতিক্রমে মুসাফিরের জন্য রোযা কাযা করা বৈধ; চাহে সে মুসাফির রোযা রাখতে সক্ষম হোক অথবা অক্ষম, রোযা তার জন্য কষ্টদায়ক হোক অথবা না হোক।

✔️ নিফাস ও ঋতুমতী মহিলা খুন থাকা অবস্থায় রোযা রাখবে না। অবশ্য যে কয় দিন তাদের রোযা ছুটে যাবে তা পরে কাযা করে নেবে।

❤️ রোযার আরকান↩️↩️


⏩ রোযার রুকন দুইটি।

১। ফজর উদয় হওয়ার পর থেকে নিয়ে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সময় ধরে যাবতীয় রোযা নষ্টকারী জিনিস থেকে বিরত থাকা।

২। নিয়ত ; আর তা হল, মহান আল্লাহর আদেশ পালন করার উদ্দেশ্যে রোযা রাখার জন্য হৃদয়ের সংকল্প।

✔️ যে ব্যক্তি ফরয (যেমন রমাযান, কাযা, নযর অথবা কাফ্ফারার) রোযা রাখবে, সে ব্যক্তির জন্য নিয়ত ও সংকল্প করা ওয়াজেব।

✔️ ‘নাওয়াইতু আন আসূমা গাদাম মিন শাহরি রামাযান’ বলে নিয়ত পড়া বিদআত।

✔️ নিয়ত মনে মনে করতে হয়, উচ্চারণ করে পড়তে হয় না।

✔️ নিয়ত ফজরের পূর্বে হওয়া জরুরী। তবে রাত্রের যে কোন অংশে করলে যথেষ্ট ও বৈধ।

❤️ রোজার বিভিন্ন আদব ↩️↩️

✔️ সেহরী খাওয়া মুস্তাহাব।

✔️ ‘‘তোমরা সাহারী খেতে অভ্যাসী হও। কারণ, সাহারীই হল বরকতময় খাদ্য।’’
(আহমাদ, মুসনাদ)

✔️ হালাল যে কোন খাবার খেলেই সাহারী খাওয়ার বিধি পালিত হয়ে যাবে। এমনকি কেউ যদি এক ঢোক দুধ, চা অথবা পানিও খায় অথবা ২/১টি বিস্কুট বা খেজুরও খায়, তাহলে তারও সাহারী খাওয়ার সুন্নত পালন হয়ে যাবে।

✔️ সাহারী খাওয়ার সময় হল অর্ধরাত্রির পর থেকে ফজরের আগে পর্যন্ত। আর মুস্তাহাব হল, ফজর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা না হলে শেষ সময়ে সাহারী খাওয়া।

❤️ শীঘ্র ইফতার ⏯️


‘‘লোকেরা ততক্ষণ মঙ্গলের মধ্যে থাকবে, যতক্ষণ তারা (সূর্য ডোবার পর নামাযের আগে) তাড়াতাড়ি ইফতার করবে।’’
(বুখারী, মুসলিম)

✔️ ‘‘দ্বীন ততকাল বিজয়ী থাকবে, যতকাল লোকেরা ইফতার করতে তাড়াতাড়ি করবে। কারণ, ইয়াহুদ ও খ্রিষ্টানরা দেরী করে ইফতার করে।’’(আবূ দাঊদ, হাকেম)

✔️ অতএব দেখার বিষয় হল সূর্যাস্ত; আযান নয়। সূর্য ডুবে গেলেই ইফতারের সময় হয়।

✔️ সময় হওয়ার সাথে সাথে শীঘ্র ইফতার করা নবুঅতের একটি আদর্শ।

About Abdul Latif Sheikh

Leave a Reply

Your email address will not be published.