আমাদের দেশে বলতে গেলে ভারতীয় উপমহাদেশে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর মুনাজাত করে এই দুআ-মুনাজাতের প্রচলন দেখতে পাওয়া যায়। এ বিষয় এখন কিছু আলোচনা পেশ করছি।
বিষয়টি মনোযোগ দিয়ে পড়ার অনুরোধ রইল।
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ শেষে দু‘আ কবুল হওয়ার কথা বহু সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত, তাহলে এ নিয়ে বিতর্ক কেন?
আসলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর দু‘আ নিয়ে বিতর্ক নয়, বিতর্ক হল এর পদ্ধতি নিয়ে। যে পদ্ধতিতে দু‘আ করা হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এভাবে দু‘আ করেছিলেন কিনা? তাই আমি এখানে আলোচনা করব সেই দু‘আ-মুনাজাত নিয়ে যার মধ্যে নিম্নোক্ত সবকটি শর্ত বিদ্যমান:
১। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর দুআ করা।
২। সেই দুআ-মুনাজাত জামাআতের সাথে করা।
৩। প্রতিদিন প্রতি ফরজ সালাত শেষে দুআ-মুনাজাত করা।
এ শর্তাবলি বিশিষ্ট দুআ-মুনাজাত কতটুকু সুন্নত সম্মত সেটাই এ অধ্যায়ের মূল আলোচ্য বিষয়।
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত আদায়ের পর প্রচলিত মুনাজাত করা না করার ব্যাপারে আমাদের দেশের লোকদের সাধারণত তিন ভাগে বিভক্ত দেখা যায়।
১। যারা সালাম ফিরানোর পর বসে বসে কিছুক্ষণ বিভিন্ন যিকর-আযকার আদায় করেন যা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
২। যারা সালাম ফিরানোর পর কোন যিকির-আযকার না করে তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যান সুন্নত নামায আদায়ের জন্য।
৩।. যারা সালাম ফিরানোর পর সর্বদা ইমাম সাহেবের সাথে একত্রে মুনাজাত করেন, মুনাজাত শেষ হওয়ার পর সুন্নত নামায আদায় করেন।
আর এ তিন ধরনের লোকদেরই এ সকল আমলের সমর্থনে কোন না কোন দলিল প্রমাণ রয়েছে।
প্রথম দলের দলিল-প্রমাণ স্পষ্ট। তাহল বুখারী ও মুসলিমসহ বহু হাদীসের কিতাবে সালাতের পর যিকির-আযকার অধ্যায়ে বিভিন্ন যিকিরের কথা সহীহ সনদে বর্ণিত আছে। যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম আমল করেছেন। অনেক ইমাম ও উলামায়ে কেরাম এ যিকির-আযকার সম্পর্কে স্বতন্ত্র পুস্তক সংকলন করেছেন।
দ্বিতীয় দলের প্রমাণ হল এই হাদীসটি
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সালাম ফিরাতেন তখন ‘আল্লাহুম্মা আনতাচ্ছালাম ওয়ামিনকাচ্ছালাম তাবারাকতা ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম’ পড়তে যতটুকু সময় লাগে তার চেয়ে বেশি সময় বসতেন না।
বর্ণনায় : তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ
তারা এ হাদীস দ্বারা বুঝে নিয়েছেন যে, এ যিকির টুকু আদায় করতে যতটুকু সময় লাগে এর চেয়ে বেশি বসা ঠিক নয়। তাই তাড়াতাড়ি সুন্নত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
আসলে এ হাদীস দ্বারা তারা যা বুঝেছেন তা সঠিক নয়।
হাদীসটির ব্যাখ্যা হলঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু ইমাম ছিলেন তাই তিনি সালাম ফিরানোর পর এতটুকু সময় মাত্র কেবলামুখী হয়ে বসতেন এরপর তিনি মুসল্লিদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন। আর তিনি যে প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর মুসল্লিদের দিকে মুখ করে বসতেন তা বহু সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
(মজমু আল ফাতাওয়া : ইমাম ইবনে তাইমিয়া)
এ হাদীস দ্বারা কখনো প্রমাণিত হয় না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম ফিরিয়ে এ দু‘আ টুকু পড়ে তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যেতেন সুন্নত নামাজ আদায়ের জন্য।
ফরজ নামাজ আদায়ের পর যিকির, তাসবীহ, তাহলীল বর্জন করে তাড়াতাড়ি সুন্নত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া মোটেও সুন্নত নয়। বরং সুন্নত হল সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যিকির, দু‘আ, তাসবীহ, তাহলীল সাধ্য মত আদায় করে তারপর সুন্নত আদায় করা।
তৃতীয় দল যারা ফরজ নামাযের পর সম্মিলিত ভাবে (জামাআতের সাথে) মুনাজাত করেন তাদের দলিল হল ঐ সকল হাদীস যাতে নামাজ শেষে দু‘আ কবুলের কথা বলা হয়েছে এবং দু‘আ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এ সকল হাদীস ছাড়া তাদের এ কাজের সমর্থনে হাদীস থেকে সরাসরি অন্য কোন প্রমাণ নেই। এমন কোন হাদীস তারা পেশ করতে পারবেন না যাতে দেখা যাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক সালাত জামাআতের সাথে আদায় শেষে সকলকে নিয়ে সর্বদা হাত তুলে মুনাজাত করেছেন।
বিষয়টি কোন তর্কবিতর্কের জন্য নহে, সবাইকে অনুরোধ বিষয়টি নিয়ে একটু ভেবে দেখবেন এবং আপনি যদি কোন সহিহ দলিল খুজে পান অবশ্যই তা কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা তার আমল করার চেষ্টা করবো, ইনশাল্লাহ।
যদি সময় থাকে এই সম্পর্কে একটি ভিডিও দেখতে পারেন, সময় না থাকলে ভিডিওটি ডাউনলোড করে রাখতে পারেন পরে দেখার জন্য।
স্যার সুন্দর সুন্দর তাফসির পাইলাম। ফিরোজ বেলাল ভাল থাকেন সুস্থ্যথাকেন দোয়াকরি। আমিন।।
চমতকার লেখা
নতুন কিছু জানুন