নামাজে চিন্তামুক্ত থাকার উপায়
পোস্ট টি অনেক বড় কিন্তু মোনযোগ দিয়ে পড়লে আপনারা অনেক উপকৃত হবেন আশা করি।।
ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হ’ল সালাত, আল্লাহর স্মরণকে হৃদয়ে সঞ্চারিত রাখার প্রক্রিয়া হিসাবে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করেছেন, আল্লাহ বলেন,
‘আর তুমি সালাত কায়েম কর আমাকে স্মরণ করার জন্য’। (ত্বোয়া-হা ২০/১৪)
আর প্রতিটি কাজে সফলতার জন্য মৌলিক শর্ত হ’ল একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতা। আর এ বিষয়টি নামাজে ক্ষেত্রে আরো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইবাদতের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদনের জন্য একাগ্রতার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু দুঃখজনক হ’লেও সত্য যে, বর্তমানে এই ব্যস্ত যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে একাগ্রচিত্তে নামাজ আদায় করা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে, অথচ একাগ্রতাবিহীন সালাত শুধুমাত্র দায়সারা ও শারীরিক ব্যায়ামের উপকারিতা ব্যতীত তেমন কিছুই বয়ে আনেনা। সার্বিক অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে রাসূল (ছাঃ)-এর নিম্নোক্ত হাদীছটি একটি কঠিন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন,
‘এই উম্মত হ’তে সর্বপ্রথম নামাজের একাগ্রতাকে উঠিয়ে নেয়া হবে, এমনকি তুমি তাদের মধ্যে কোন একাগ্রচিত্ত মুছল্লী খুঁজে পাবে না’। [1]
একই বক্তব্য প্রতিধ্বনিত হয়েছে হুযায়ফা (রাঃ)-এর নিম্নোক্ত বাণীতে। তিনি বলেন,
‘সর্বপ্রথম তোমরা নামাজে একাগ্রতা হারাবে। অবশেষে হারাবে নামাজ। অধিকাংশ নামাজ আদায়কারীর মধ্যে কোন কল্যাণ অবশিষ্ট থাকবে না। হয়তো মসজিদে প্রবেশ করে একজন বিনয়ী-একাগ্রতা সম্পন্ন নামাজ আদায়কারীকেও পাওয়া যাবে না’। [2]
খুশূ বা একাগ্রতার পরিচয়-
‘খুশূ’-এর আভিধানিক অর্থ হ’ল দীনতার সাথে অবনত হওয়া, ধীরস্থির হওয়া ইত্যাদি, ইবনু কাছীর বলেন,
খুশূ অর্থ- স্থিরতা, ধীরতা, বিনয় ও নম্রতা। [3]
ইবনুল ক্বাইয়িম বলেন,
খুশূ হ’ল হৃদয়কে দীনতা ও বিনয়ের সাথে প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থাপন করা।[4]
প্রত্যেক ইবাদত কবুল হওয়া এবং তার প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করার আবশ্যিক শর্ত হ’ল খুশূ। আর শ্রেষ্ঠ ইবাদত নামাজের ক্ষেত্রে এর আবশ্যিকতা যে কত বেশী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন,
‘তোমরা আল্লাহর সম্মুখে দন্ডায়মান হও বিনীতভাবে’ (বাক্বারাহ ২/২৩৮)।
নামাজের মধ্যে খুশূ কেবল তারই অর্জিত হবে, যে সবকিছু ত্যাগ করে নিজেকে শুধুমাত্র নামাজের জন্য নিবিষ্ট করে নিবে এবং সবকিছুর ঊর্ধ্বে নামাজকে স্থান দিবে। তখনই নামাজ তার অন্তরকে প্রশান্তিতে ভরে দিবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলতেন,
‘নামাজেই আমার চোখের প্রশান্তি রাখা হয়েছে’। [5]
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে মনোনীত বান্দাদের আলোচনায় ‘খুশূ-খুযু’র সাথে নামাজ আদায়কারী নারী-পুরুষের কথা উল্লেখ করেছেন এবং তাদের জন্য নির্ধারিত ক্ষমা ও সুমহান প্রতিদানের ঘোষণা দিয়েছেন (আহযাব ৩৩/৩৫)।
‘খুশূ’ বান্দার উপর নামাজের এই কঠিন দায়িত্বকে স্বাভাবিক ও প্রশান্তিময় করে তোলে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই তা বিনয়ী-একনিষ্ঠ ব্যতীত অন্যদের উপর অতীব কষ্টকর’ (বাক্বারা ২/৪৫)।
যেকোন ইবাদতের ক্ষেত্রে যখন রাসূল (ছাঃ)-এর নিম্নোক্ত বাণীর অনুসরণ করা হবে, তখনই তা এক সফল ইবাদতে পরিণত হবে। হৃদয়জগতকে অপার্থিব আলোয় উদ্ভাসিত করবে। তিনি বলেন,
‘আল্লাহর ইবাদত কর এমনভাবে, যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন’। [6] [1]. ত্বাবারাণী; ছহীহুল জামে‘ হা/২৫৬৯।
[2]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, ১৯৯৬), ১/৫১৭ পৃঃ। [3]. ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম (দার তাইয়েবা, ১৪২০/১৯৯৯, ২য় সংস্করণ), ৬/৪১৮ পৃঃ। [4]. মাদারিজুস সালেকীন ১/৫১৬ পৃঃ। [5]. আহমাদ, মিশকাত হা/৫২৬১, সনদ হাসান। [6]. বুখারী হা/৫০; মুসলিম হা/৮; মিশকাত হা/২।আর লিখলামনা আপনারা ধৈর্য্যহারা হতে পারেন তাই নামাজে চিন্তা মুক্ত থাকার জন্য আরো জানতে নিচের ভিডিওটি দেখুন।
One comment
Pingback: কিতাবুত তাওহীদ ISLAMIC RESEARCH CENTER ONLINE