সুরা বাকারা এর ১৭৭ নং আয়াতের দারস (তাফসির)
لَیۡسَ الۡبِرَّ اَنۡ تُوَلُّوۡا وُجُوۡهَكُمۡ قِبَلَ الۡمَشۡرِقِ وَ الۡمَغۡرِبِ وَ لٰكِنَّ الۡبِرَّ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ الۡمَلٰٓئِكَۃِ وَ الۡكِتٰبِ وَ النَّبِیّٖنَ ۚ وَ اٰتَی الۡمَالَ عَلٰی حُبِّهٖ ذَوِی الۡقُرۡبٰی وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰكِیۡنَ وَ ابۡنَ السَّبِیۡلِ ۙ وَ السَّآئِلِیۡنَ وَ فِی الرِّقَابِ ۚ وَ اَقَامَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَی الزَّكٰوۃَ ۚ وَ الۡمُوۡفُوۡنَ بِعَهۡدِهِمۡ اِذَا عٰهَدُوۡا ۚ وَ الصّٰبِرِیۡنَ فِی الۡبَاۡسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ حِیۡنَ الۡبَاۡسِ ؕ اُولٰٓئِكَ الَّذِیۡنَ صَدَقُوۡا ؕ وَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡمُتَّقُوۡنَ
পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে পুণ্য নেই; কিন্তু পুণ্য আছে আল্লাহ, পরকাল, ফিরিশতাগণ, সমস্ত কিতাব এবং নবীগণকে বিশ্বাস করলে এবং অর্থের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, (এতীম-মিসকীন) মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী (ভিক্ষুক)গণকে এবং দাস মুক্তির জন্য দান করলে, নামায যথাযথভাবে পড়লে ও যাকাত প্রদান করলে, প্রতিশ্রুতি পালন করলে এবং দুঃখ-দৈন্য, রোগ-বালা ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণ করলে। এরাই তারা, যারা সত্যপরায়ণ এবং ধর্মভীরু।
নামকরণ:
বাকারাহ মানে গাভী। এ সূরার ৬৭ থেকে ৭৩ নম্বর আয়াত পর্যন্ত হযরত মুসা (আঃ) এর সময়কার বনি ইসরাইল এর গাভী কুরবানীর ঘটনা উল্লেখ থাকার কারণে এর এই নামকরণ করা হয়েছে।
নাযিলের সময়-কাল
এ সূরার বেশীর ভাগ মদীনায় হিজরাতের পর মাদানী জীবনের একেবারে প্রথম যুগে নাযিল হয় । আর এর কম অংশ পরে নাযিল হয় । বিষয়স্তুর সাথে সামঞ্জস্য ও সাদৃশ্যের সম্পর্কিত যে আয়াতগুলো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের একেবারে শেষ পর্যায়ে নাযিল হয় সেগুলোও এখানে সংযোজিত করা হয়েছে । যে আয়াতগুলো দিয়ে সূরাটি শেষ করা হয়েছে সেগুলো হিজরাতের আগে মক্কায় নাযিল হয় । কিন্তু বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্যের কারণে সেগুলোকেও এ সূরার সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে ।
শানে নুযুল
ইহুদি ও মুনাফিকদের সংশোধন ও সতর্ককরণ:
- মদীনায় হিজরতের পর রাসূল (সা.)-কে মুখোমুখি হতে হয় ইহুদি সম্প্রদায় ও মুনাফিকদের বিরোধিতার।
- সুরা বাকারার বহু আয়াত এই ইহুদি সম্প্রদায়ের কপটতা, আহকার, কিতাব বিকৃতি, এবং নবী খুন করার ইতিহাস তুলে ধরে তাদের সতর্ক করে।
নবনির্মিত মুসলিম উম্মাহর জন্য আইন-কানুন ও আদর্শ নির্ধারণ:
- নামায, রোযা, হজ, যাকাত, তালাক, বিয়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত বিধান এসেছে।
- মুসলমানদের একটি পূর্ণাঙ্গ জাতি হিসেবে গঠন ও তাদেরকে “উম্মাতান ওসাতা” (মাঝারি ও উত্তম জাতি) হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
কিবলা পরিবর্তনের পটভূমি:
- প্রাথমিকভাবে মুসলিমরা বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায আদায় করতেন, কিন্তু পরবর্তীতে কিবলা কাবা শরীফের দিকে পরিবর্তন করা হয় (আয়াত 144)। এটি একটি বিশিষ্ট ঘটনা এবং মুসলিম পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বনী ইস্রাঈলের ইতিহাস শিক্ষা হিসেবে বর্ণিত:
- মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করার জন্য পূর্ববর্তী জাতি—বনী ইস্রাঈলের অবাধ্যতা, নেয়ামতের অবমূল্যায়ন ও দ্বীন থেকে বিচ্যুতির উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে।
আয়াত-১৭৭
لَیۡسَ الۡبِرَّ اَنۡ تُوَلُّوۡا وُجُوۡهَكُمۡ قِبَلَ الۡمَشۡرِقِ وَ الۡمَغۡرِبِ وَ لٰكِنَّ الۡبِرَّ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ الۡمَلٰٓئِكَۃِ وَ الۡكِتٰبِ وَ النَّبِیّٖنَ ۚ وَ اٰتَی الۡمَالَ عَلٰی حُبِّهٖ ذَوِی الۡقُرۡبٰی وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰكِیۡنَ وَ ابۡنَ السَّبِیۡلِ ۙ وَ السَّآئِلِیۡنَ وَ فِی الرِّقَابِ ۚ وَ اَقَامَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَی الزَّكٰوۃَ ۚ وَ الۡمُوۡفُوۡنَ بِعَهۡدِهِمۡ اِذَا عٰهَدُوۡا ۚ وَ الصّٰبِرِیۡنَ فِی الۡبَاۡسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ حِیۡنَ الۡبَاۡسِ ؕ اُولٰٓئِكَ الَّذِیۡنَ صَدَقُوۡا ؕ وَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡمُتَّقُوۡنَ
পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে পুণ্য নেই; কিন্তু পুণ্য আছে আল্লাহ, পরকাল, ফিরিশতাগণ, সমস্ত কিতাব এবং নবীগণকে বিশ্বাস করলে এবং অর্থের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, (এতীম-মিসকীন) মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী (ভিক্ষুক)গণকে এবং দাস মুক্তির জন্য দান করলে, নামায প্রতিষ্ঠা করলে ও যাকাত প্রদান করলে, প্রতিশ্রুতি পালন করলে এবং দুঃখ-দৈন্য, রোগ-বালা ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণ করলে। এরাই তারা, যারা সত্যপরায়ণ এবং ধর্মভীরু।
এই আয়াতে যে বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে।
১। আসল ধার্মিকতা কেবল রীতি-নীতি নয়
– শুধু নামাযে কেবলা ঘোরানো বা বাহ্যিক কিছু পালন করাই ধার্মিকতার পূর্ণতা নয়। প্রকৃত তাকওয়া হল বিশ্বাস ও আমলের সমন্বয়।
لَیۡسَ الۡبِرَّ اَنۡ تُوَلُّوۡا وُجُوۡهَكُمۡ قِبَلَ الۡمَشۡرِقِ وَ الۡمَغۡرِبِ
পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে পুণ্য নেই;
২। আকীদার ভিত্তি
– প্রকৃত ঈমান পাঁচটি মূল বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে আছে:
- আল্লাহ
- আখিরাত
- ফেরেশতা
- কিতাবসমূহ
- নবীগণ
وَ لٰكِنَّ الۡبِرَّ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ الۡمَلٰٓئِكَۃِ وَ الۡكِتٰبِ وَ النَّبِیّٖنَ
কিন্তু পুণ্য আছে আল্লাহ, পরকাল, ফিরিশতাগণ, সমস্ত কিতাব এবং নবীগণকে বিশ্বাস করলে
সহি মুসলিম, হাদিস নং-৮ (যে হাদিসটিকে হাদিসে জিবরাইল বলে) হাদিসের শেষের দিকে বলা হয়েছে,
عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ قَالَ . قَالَ فَأَخْبِرْنِي عَنِ الإِيمَانِ . قَالَ “ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ “ . قَالَ صَدَقْتَ
ওমর ইবনে খত্তাব (রাঃ) হতে বর্নিত, আগন্তুক বললেন, আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ঈমান হল আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসুলগণের প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনবে, আর তাকদিরের ভালমন্দের প্রতি ঈমান রাখবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন।
উল্লেখিত হাদিসে ঈমানের রোকন বা মুল বিষয় বলা হচ্ছে ৬ টি,
১। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা
২। ফেরেস্তাদের প্রতি ঈমান আনা
৩। আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাবের উপর ঈমান আনা
৪। আল্লাহর রাসুলদের প্রতি ঈমান আনা
৫। পরকালের প্রতি ঈমান আনা
৬। তাকদিরের ভালো মন্দের প্রতি ঈমান আনা
আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা
সুরা ইখলাস আয়াত ১ থেকে ৪
وَ لَمۡ یَکُنۡ لَّهٗ کُفُوًا اَحَدٌ– لَمۡ یَلِدۡ وَ لَمۡ یُوۡلَدۡ – اَللّٰهُ الصَّمَدُ – قُلۡ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ
অর্থ : (হে রাসুল! আপনি) বলুন, তিনিই আল্লাহ, একক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। আর তার সমতুল্য কেউ নেই।’ (সুরা ইখলাস)
পরকালের প্রতি ঈমান আনা
সুরা আল মুমিনুন আয়াত ১৬
ثُمَّ اِنَّکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ تُبۡعَثُوۡنَ
তারপর কিয়ামতের দিন অবশ্যই তোমরা পুনরুত্থিত হবে।
ফেরেস্তাদের প্রতি ঈমান আনা
আমরা প্রসিদ্ধ চার জন ফেরেশতার নাম সবাই জানি, এদের মধ্যে আমরা যাকে আজরাইল বলি তার নাম আসলে আজরাইল কিনা? আমাদের সমাজে ‘আজরাইল’ নামটি কিভাবে প্রচলিত হল-
আজরাইল (عزرائيل/Azrael) শব্দটি আরবি বরং ইবরানি (হিব্রু/Hebrew) ভাষা থেকে এসেছে। জান কবজের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতাকে ইবরানি (হিব্রু) ভাষায় ‘আজরাইল/Azrael’ বলা হয়। বিভিন্ন ইসরাইলি বর্ণনায় এ শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়।
ইসলামি লেখকদের মধ্যে ফখরুদ্দিন রাযী, ইমাম বাগাভী প্রমুখ কতিপয় তাফসির কারক তাদের তাফসির গ্রন্থে এ নামটি ব্যবহার করেছেন। এ কারণে এ নামটি আমাদের সমাজে বিভিন্ন বক্তা, ইসলামি লেখক এবং সর্ব সাধারণের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়েছে।
কিন্তু কুরআন-হাদিসে এই নামটির অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। কুরআনে তাকে বলা হয়েছে মালাকুল মউত (মৃত্যু দূত)। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,
সুরা সূরা আস সাজদাহ আয়াত ১১
قُلۡ یَتَوَفّٰىکُمۡ مَّلَکُ الۡمَوۡتِ الَّذِیۡ وُکِّلَ بِکُمۡ ثُمَّ اِلٰی رَبِّکُمۡ تُرۡجَعُوۡنَ
“বলুন, তোমাদের প্রাণ হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ‘মালাকুল মওত’ তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।”
জিবরাঈল ও মিকাঈলের আঃ সম্পর্কে
সুরা আল বাকারার আয়াত-৯৮
مَنۡ کَانَ عَدُوًّا لِّلّٰهِ وَ مَلٰٓئِکَتِهٖ وَ رُسُلِهٖ وَ جِبۡرِیۡلَ وَ مِیۡکٰىلَ فَاِنَّ اللّٰهَ عَدُوٌّ لِّلۡکٰفِرِیۡنَ
যে কেউ আল্লাহ, তার ফেরেশতা, রাসূলগণ এবং জিবরাঈল ও মিকাঈলের শত্রু, সে জেনে রাখুক আল্লাহ নিশ্চয় সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের শত্রু
ইসরাফিল [আ.]: এই ফেরেস্তা কিয়ামত বা বিশ্বপ্রলয় ঘোষণা করবেন। তার কথা কুরআন শরীফে বলা না হলেও হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাবের উপর ঈমান আনা
সুরা আল ইমরান আয়াত -০৩
نَزَّلَ عَلَیۡکَ الۡکِتٰبَ بِالۡحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَیۡنَ یَدَیۡهِ وَ اَنۡزَلَ التَّوۡرٰىۃَ وَ الۡاِنۡجِیۡلَ
তিনি সত্যসহ আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন, পূর্বে যা এসেছে(১) তার সত্যতা প্রতিপন্নকারীরূপে। আর তিনি নাযিল করেছিলেন তাওরাত ও ইঞ্জীল
এবং আল্লাহ তায়ালা বলেন
সুরা বনি ইসরাইল আয়াত ৫৫
وَّ اٰتَیۡنَا دَاوٗدَ زَبُوۡرًا
এবং দাউদকে দিয়েছি যাবূর।
আল্লাহর রাসুলদের প্রতি ঈমান আনা
পৃথীবিতে নবী রাসুলদের সংখ্যা কত? অনেকেই এইরকম প্রশ্ন করে থাকে –
আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত এমনকি স্কুলের বইতে ও রয়েছে যে, নবী রাসূলদের সংখ্যা ১ লক্ষ ২৪ হাজার মতান্তরে ২ লক্ষ ২৪ হাজার, এমনই মতান্তর এক লাফেই ১ লক্ষ বেশি আবার যার কোন ভিত্তি নেই। এটি একটি ঈমানী বিষয় যা মিথ্যা অথবা শক্ত দলিল ছাড়া গ্রহণযোগ্য নয়। এবং কোরআন ও হাদিসের কোথাও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি। একটি দুর্বল হাদিস ১ লক্ষ ২৪ হাজারের কথা এসেছে এবং দুর্বল হাদীস দিয়ে কোন ঈমানী বিষয়ের উপরে আমল করা যাবেনা। তাই আমাদের উচিত হবে, নবী-রাসূলগণ আসমানী কিতাবের উপর ঈমান আনা এবং তাদের সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালা ভাল জানেন।
তাঁদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যকের নাম কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। আর অধিকাংশের নাম উল্লেখ করা হয় নি। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
সুরা সূরা আন নিসা আয়াত ১৬৪
وَ رُسُلًا قَدۡ قَصَصۡنٰهُمۡ عَلَیۡکَ مِنۡ قَبۡلُ وَ رُسُلًا لَّمۡ نَقۡصُصۡهُمۡ عَلَیۡکَ ؕ وَ کَلَّمَ اللّٰهُ مُوۡسٰی تَکۡلِیۡمًا
এছাড়া এমন রাসূল পাঠিয়েছি যাদের ইতিবৃত্ত আমি আপনাকে শুনিয়েছি ইতিপূর্বে এবং এমন রাসূল পাঠিয়েছি যাদের বৃত্তান্ত আপনাকে শোনাইনি। আর মূসার সাথে আল্লাহ সাক্ষাৎ বাক্যালাপ করেছেন
৩। সামাজিক দায়িত্ব
– শুধু আল্লাহর হক নয়, বান্দার হকও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধন-সম্পদকে প্রিয় হলেও তা আত্মীয়, এতিম, মিসকীন, মুসাফির, ভিক্ষুক এবং দাসমুক্তির জন্য ব্যয় করতে হবে।
ۚ وَ اٰتَی الۡمَالَ عَلٰی حُبِّهٖ ذَوِی الۡقُرۡبٰی وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰكِیۡنَ وَ ابۡنَ السَّبِیۡلِ ۙ وَ السَّآئِلِیۡنَ وَ فِی الرِّقَابِ
অর্থের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, (এতীম-মিসকীন) মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী (ভিক্ষুক)গণকে এবং দাস মুক্তির জন্য দান করলে
সুরা আল ইমরানের ৯২ নং আয়াতে বলা হয়েছে
لَنۡ تَنَالُوا الۡبِرَّ حَتّٰی تُنۡفِقُوۡا مِمَّا تُحِبُّوۡنَ ۬ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فَاِنَّ اللّٰهَ بِهٖ عَلِیۡمٌ
তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো সওয়াব অর্জন করবে না। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবগত
৪। ইবাদতের মূল স্তম্ভ
– সালাত ও যাকাত ইসলামের মৌলিক ইবাদত। এগুলো ছাড়া পূর্ণ ধার্মিকতা সম্ভব নয়।
ۚ وَ اَقَامَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَی الزَّكٰوۃَ
নামায প্রতিষ্ঠা করলে ও যাকাত প্রদান করলে
এছাড়া সুরা বাকারার ৪৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে
وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوۃَ وَ ارۡكَعُوۡا مَعَ الرّٰكِعِیۡنَ
আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা কর ও যাকাত দাও এবং রুকূ’কারীদের সাথে রুকূ কর
৫। চরিত্রগত গুণাবলী
– প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা, সত্যবাদী হওয়া, এবং ধৈর্য ধারণ করা প্রকৃত তাকওয়ার নিদর্শন।
ۚ وَ الۡمُوۡفُوۡنَ بِعَهۡدِهِمۡ اِذَا عٰهَدُوۡا ۚ وَ الصّٰبِرِیۡنَ فِی الۡبَاۡسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ حِیۡنَ الۡبَاۡسِ
প্রতিশ্রুতি পালন করলে এবং দুঃখ-দৈন্য, রোগ-বালা ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণ করলে।
৬। ধৈর্যের গুরুত্ব
– দারিদ্র্য, রোগ-ব্যাধি, কষ্ট এবং যুদ্ধাবস্থায় ধৈর্যশীলদের আল্লাহ বিশেষভাবে মুত্তাকী ও সত্যবাদী বলেছেন।
ۚ وَ الۡمُوۡفُوۡنَ بِعَهۡدِهِمۡ اِذَا عٰهَدُوۡا ۚ وَ الصّٰبِرِیۡنَ فِی الۡبَاۡسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ حِیۡنَ الۡبَاۡسِ
প্রতিশ্রুতি পালন করলে এবং দুঃখ-দৈন্য, রোগ-বালা ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণ করলে।
এছাড়া সুরা বাকারার ১৫৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اسۡتَعِیۡنُوۡا بِالصَّبۡرِ وَ الصَّلٰوۃِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ مَعَ الصّٰبِرِیۡنَ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা সাহায্য চাও সবর ও সালাতের মাধ্যমে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সবরকারীদের সাথে আছেন।
শিক্ষা
প্রকৃত তাকওয়া হল ঈমান, ইবাদত, দানশীলতা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা ও ধৈর্যের সমন্বয়। কেবল কোন একটি গুণ দিয়ে তাকওয়া অর্জিত হয় না।