বই নোট: ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি লেখকঃ- সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী
অনুবাদঃ- মুহাম্মদ আবদুর রহীম
ইসলামী আন্দোলনঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন সুরা তওবা-১১১
نَّ اللّٰهَ اشۡتَرٰی مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اَنۡفُسَهُمۡ وَ اَمۡوَالَهُمۡ بِاَنَّ لَهُمُ الۡجَنَّۃَ ؕ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ فَیَقۡتُلُوۡنَ وَ یُقۡتَلُوۡنَ
নিঃসন্দেহে আল্লাহ বিশ্বাসীদের নিকট থেকে তাদের প্রাণ ও তাদের ধন-সম্পদসমূহকে বেহেশ্তের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন; তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে অতঃপর তারা মারে ও মরে।
ইসলাম অর্থ
– ইসলাম আরবী শব্দ। যার অর্থঃ আত্মসমর্পণ করা, কোন কিছু মাথা পেতে নেয়া। নিজের ইচ্ছা আর মর্জি অনুযায়ী না চেল আল্রাহর হুকুম মতে চলার জন্য তার নিকট আত্মসমর্পন করার নাম ইসলাম।
আন্দোলন অর্থ
– حركة, হরকত করা–নড়াচড়া করা, MOVEMENT,
– আন্দোলনঃ দোলন থেকে যার উৎপত্তি। দোলন মানে নড়াচড়া। আন্দোলন মানে নড়াচড়া, অশান্তি, অশৃংখলা, অব্যবস্থাপনা। একটি সূদূর প্রসারী লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য সাময়িক নড়াচড়া, অশান্তি, অশৃংখলা, অব্যবস্থাপনা হলো আন্দোলন।
ইসলামী আন্দোলনঃ
যাকে আরবীতে বলা হয়ঃ الحركة الاسلامية
আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য যে নিয়ম–কানুন দিয়েছেন, সেই নিয়ম কানুন সমাজে চালু করা বা প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে সব কাজ করতে হয়, তার নাম ইসলামী আন্দোলন।
মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগ হতে গায়রুল্লাহর প্রভুত্ব উৎখাত করে আল্লাহরকর্তৃত্ব ও রাসূল (সা:) ত্রর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য যে সর্বাত্বকচেষ্টাও প্রচেষ্টা তাকে ইসলামী আন্দোলন বলে।
“ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি” বইটি ১৯৪৫ সালের ২১শে এপ্রিল পূর্ব পাঞ্জাবের পাঠান কোটস্থ দারুল ইসলামে মরহুম মাওলানা সাইয়েদ আবুল বইটি দুই ভাগে বিভক্ত
১. ভূমিকা ২. মূল আলোচনা
ভূমিকাঃ
১। অসৎ নেতৃত্বের ফলাফল
সুরা বনি ইসরাঈল আয়াত-৭১
یَوۡمَ نَدۡعُوۡا کُلَّ اُنَاسٍۭ بِاِمَامِهِمۡ
যখন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের নেতা সহ আহবান করব।
২। বিশ্বব্যপী অশান্তি
সুরা শুরা-আয়াত, ৩০
وَ مَاۤ اَصَابَکُمۡ مِّنۡ مُّصِیۡبَۃٍ فَبِمَا کَسَبَتۡ اَیۡدِیۡکُمۡ وَ یَعۡفُوۡا عَنۡ کَثِیۡرٍ
আর তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তোমাদের হাত যা অর্জন করেছে তার কারণে এবং অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন
৩। জুলুম নির্যাতনের সর্বব্যাপী সয়লাব। — নৈতিকতার অবক্ষয়
৪। সামাজিক ভাঙন
৫। মানব বুদ্ধির আবিষ্কৃত সমগ্র শক্তি ও যন্ত্র মানুষের কল্যাণ ও উন্নতি বিধানের পরিবর্তে ধ্বংস সাধনের কাজে নিয়োজিত হচ্ছে।
মূল আলোচনাঃ-
মূল বক্তব্যে দশটি বিষয় আলোচিত হয়েছে
১. নেতৃত্বের গুরুত্ব
২. সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা দ্বীন ইসলামের মূল লক্ষ্য
৩. নেতৃত্বের ব্যাপারে আল্লাহর নিয়ম
৪. মানুষের উত্থান-পতন নৈতিক চরিত্রের উপর নির্ভরশীল
৫. মৌলিক মানবীয় চরিত্রের বিশ্লেষণ
৬. ইসলামী নৈতিকতা
৭. নেতৃত্ব সম্পর্কে খোদায়ী নীতির সারকথা
৮. মৌলিক মানবীয় চরিত্র ও ইসলামী নৈতিক শক্তির তারতম্য
৯. ইসলালী নৈতিকতার চার পর্যায়
১০. ভুল ধারনার অপনোদন
১) নেতৃত্বের গুরুত্বঃ
সুরা আম্বিয়া আয়াত-৭৩
وَ جَعَلۡنٰهُمۡ اَئِمَّۃً یَّهۡدُوۡنَ بِاَمۡرِنَا
আর আমরা তাদেরকে করেছিলাম নেতা; তারা আমাদের নির্দেশ অনুসারে মানুষকে সঠিক পথ দেখাত
সকল প্রকার ক্রিয়াকার্যের মূলে রয়েছে নেতৃত্বের ভূমিকা। দেশ, জাতি, সমাজ সব কিছুই নেতৃত্বের অধীনে পরিচালিত হয়, এর উপর নির্ভর করে কোন দেশ বা জাতির উন্নতি অগ্রগতি কিংবা পতন।
সৎ নেতৃত্বের গুরুত্বঃ
১. সততা ন্যায় নীতি এবং কল্যাণকর কার্যক্রম সুন্দর ও সুচারুরূপে বাস্তবায়িত হয়ে সমাজ সুন্দরের পরশে বিকশিত ও প্রস্ফুটিত হয়।
২. অসৎ লোক এখানে সৎ হতে বাধ্য ।
৩. অন্যায়, অনাচার, পাপাচার এখানে বিকাশ লাভ করতে পারে না।
২) সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা দ্বীন ইসলামের মূল লক্ষ্যঃ
দ্বীন ইসলামের মৌলিক দাবী-৩টি
১. সকল মানুষকে একমাত্র আল্লাহ্র দাস হিসেবে জীবন যাপন করতে হবে।
২. খোদার দেয়া আইনকেই একমাত্র জীবন বিধান হিসেবে মানতে হবে।
৩. পৃথিবীর বুক থেকে সকল প্রকার অন্যায়, অশান্তি দূরীভূত করতে হবে।
সৎ নেতৃত্বের সুফলঃ
১. মানব সমাজ ব্যবস্থা আল্লাহ কর্তৃক ব্যাপক সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে।
২. কল্যাণ জনক কাজের ব্যাপারে প্রসার লাভ করবে। ৩. অসৎ লোকগুলো সৎ থাকতে বাধ্য হবে।
৪. সমাজে অন্যায় ও অবিচার নিঃশেষ না হলেও ফুলে ফলে বিকশিত হবে না।
৩) নেতৃত্বের ব্যাপারে আল্লাহর নিয়মঃ
১. আল্লাহ গোটা বিশ্ব একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মের অধীনে সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর সকল কিছুই সেই স্থায়ী বিধানের অনুসারী।
২. শুধু কামনা বাসনা থাকলেই কাজ হবে না। একজন কৃষকের ভূমিকা। ৩. নৈতিক চরিত্রের উন্নতি সাধন করলেই আল্লাহ নেতৃত্ব দিবেন ৪. যোগ্যতার বিকাশ সাধন।
৪) মানুষের উত্থান পতন নৈতিক চরিত্রের উপর নির্ভরশীলঃ
• মানুষের সামষ্টিক সাফল্য বস্তুনিষ্ঠ ও নৈতিক শক্তির উপর নির্ভরশীল। – মানুষের জীবনে মূল সিদ্ধান্তকারী শক্তি হচ্ছে নৈতিক শক্তি।
৫) মৌলিক মানবীয় চরিত্রের বিশ্লেষণঃ-
সৎ ও অসৎ, পবিত্র-অপবিত্র ইত্যাদি প্রশ্নের উর্দ্ধে থেকে দুনিয়ার সফলতা লাভের জন্য অপরিহার্য গুনগুলি মৌলিক মানবীয় গুণ।
মৌলিক মানবীয় গুণাবলির তিনটি স্তর
১. মৌলিক গুন।
২. ভদ্রতামূলক স্বভাব
৩. পূর্ণতাদানকারী গুন।
৬) ইসলামী নৈতিকতাঃ
• ইসলাম মৌলিক মানবীয় চরিত্রকে সুদৃঢ় করে দেয় এবং চরম প্রান্তসীমা পর্যন্ত এর ক্ষেত্র ও পরিধি সম্প্রসারিত করে। • উন্নত নৈতিকতার একটি অতি জাঁকজমকপূর্ণ পর্যায় রচনা করে দেয়। এর ফলে মানুষ সৌজন্য ও মাহাত্ম্যের এক চুড়ান্ত ও উচ্চ পর্যায়ে আরোহণ করে থাকে।
৭) নেতৃত্ব সম্পর্কে আল্লাহর নীতির সারকথাঃ
১. নেতৃত্ব দানের ব্যাপারে আল্লাহ্র নিয়ম ও রীতি স্থায়ী
২. আল্লাহ তায়ালা নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের চাবিকাঠি এমন একটি দলের হাতে ন্যস্ত করেন যাদের তিনটি গুন রয়েছে
ক. ইসলামী নৈতিকতা ও মৌলিক মানবীয় চরিত্রে ভূষিত।
খ. জাগতিক কার্যকারণ ও জড় উপায়-উপাদান প্রয়োগকারী। গ. সুসংগঠিত দল।
৮) মৌলিক মানবীয় চরিত্র ও ইসলামী নৈতিক শক্তির তারতম্যঃ
নৈতিক শক্তি বলতে মানবীয় চরিত্র হলে জাগতিক ও উপায় উপাদান বস্তুগত শক্তি অবশ্যই প্রয়োজনীয়। তবে, নৈতিক শক্তি বলতে মৌলিক মানবীয় চরিত্র ও ইসলামী নৈতিকতা বুঝালে বৈষয়িক ও জড় শক্তির অভাব পূরণ করা যায়।
৯) ইসলামী নৈতিকতার চার পর্যায়ঃ
(১) ঈমান: (২) ইসলাম: (৩) তাকওয়া: (৪) ইহসান:
১০) ভুল ধারনার অপনোদনঃ
(১) আল্লাহ নবীকে প্রেরন করেছেন কেন? নবী প্রেরণের উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহর দাসত্ব বিমুখতা, ধর্মহীনতা, নিজের মনগড়া নিয়ম-বিধানের অনুসরন মুলোচ্ছেদ করা।
আল্লাহ তায়ালা বলেন সুরা যারিয়াতের ৫৬ নং আয়াত
وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ
আর আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এজন্যেই যে, তারা কেবল আমার ইবাদাত করবে