Sunday , August 17 2025

সুরা বাকারা ২৫৬-২৫৭ আয়াতের দারস (তাফসীর)

لَاۤ اِكۡرَاهَ فِی الدِّیۡنِ ۟ۙ قَدۡ تَّبَیَّنَ الرُّشۡدُ مِنَ الۡغَیِّ ۚ فَمَنۡ یَّكۡفُرۡ بِالطَّاغُوۡتِ وَ یُؤۡمِنۡۢ بِاللّٰهِ فَقَدِ اسۡتَمۡسَكَ بِالۡعُرۡوَۃِ الۡوُثۡقٰی ٭ لَا انۡفِصَامَ لَهَا ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ

اَللّٰهُ وَلِیُّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ۙ یُخۡرِجُهُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ۬ؕ وَ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡۤا اَوۡلِیٰٓـُٔهُمُ الطَّاغُوۡتُ ۙ یُخۡرِجُوۡنَهُمۡ مِّنَ النُّوۡرِ اِلَی الظُّلُمٰتِ ؕ اُولٰٓئِكَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ

২৫৬। দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে কেন জোর-জবরদস্তি নেই; সত্য পথ সুস্পষ্ট হয়েছে ভ্রান্ত পথ থেকে। অতএব, যে তাগুতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহর উপর ঈমান আনবে সে এমন এক দৃঢ়তর রজ্জু ধারন করল যা কখনো ভাঙ্গবে না। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী

২৫৭। আল্লাহ তাদের অভিভাবক যারা ঈমান আনে, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোতে নিয়ে যান। আর যারা কুফরী করে তাগূত তাদের অভিভাবক, এরা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়। তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে

নামকরণ:

বাকারাহ মানে গাভী। এ সূরার ৬৭ থেকে ৭৩ নম্বর আয়াত পর্যন্ত হযরত মুসা (আঃ) এর সময়কার বনি ইসরাইল এর গাভী কুরবানীর ঘটনা উল্লেখ থাকার কারণে এর এই নামকরণ করা হয়েছে।

নাযিলের সময়-কাল

এ সূরার বেশীর ভাগ মদীনায় হিজরাতের পর মাদানী জীবনের একেবারে প্রথম যুগে নাযিল হয় । আর এর কম অংশ পরে নাযিল হয় । বিষয়স্তুর সাথে সামঞ্জস্য ও সাদৃশ্যের সম্পর্কিত যে আয়াতগুলো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের একেবারে শেষ পর্যায়ে নাযিল হয় সেগুলোও এখানে সংযোজিত করা হয়েছে । যে আয়াতগুলো দিয়ে সূরাটি শেষ করা হয়েছে সেগুলো হিজরাতের আগে মক্কায় নাযিল হয় । কিন্তু বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্যের কারণে সেগুলোকেও এ সূরার সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে ।

শানে নুযুল

ইহুদি ও মুনাফিকদের সংশোধন ও সতর্ককরণ:

  • মদীনায় হিজরতের পর রাসূল (সা.)-কে মুখোমুখি হতে হয় ইহুদি সম্প্রদায় ও মুনাফিকদের বিরোধিতার।
    • সুরা বাকারার বহু আয়াত এই ইহুদি সম্প্রদায়ের কপটতা, আহকার, কিতাব বিকৃতি, এবং নবী খুন করার ইতিহাস তুলে ধরে তাদের সতর্ক করে।

নবনির্মিত মুসলিম উম্মাহর জন্য আইন-কানুন ও আদর্শ নির্ধারণ:

  • নামায, রোযা, হজ, যাকাত, তালাক, বিয়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত বিধান এসেছে।
    • মুসলমানদের একটি পূর্ণাঙ্গ জাতি হিসেবে গঠন ও তাদেরকে “উম্মাতান ওসাতা” (মাঝারি ও উত্তম জাতি) হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

কিবলা পরিবর্তনের পটভূমি:

  • প্রাথমিকভাবে মুসলিমরা বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায আদায় করতেন, কিন্তু পরবর্তীতে কিবলা কাবা শরীফের দিকে পরিবর্তন করা হয় (আয়াত 144)। এটি একটি বিশিষ্ট ঘটনা এবং মুসলিম পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বনী ইস্রাঈলের ইতিহাস শিক্ষা হিসেবে বর্ণিত:

  • মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করার জন্য পূর্ববর্তী জাতি—বনী ইস্রাঈলের অবাধ্যতা, নেয়ামতের অবমূল্যায়ন ও দ্বীন থেকে বিচ্যুতির উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে।

আয়াত-২৫৬

لَاۤ اِكۡرَاهَ فِی الدِّیۡنِ ۟ۙ قَدۡ تَّبَیَّنَ الرُّشۡدُ مِنَ الۡغَیِّ ۚ فَمَنۡ یَّكۡفُرۡ بِالطَّاغُوۡتِ وَ یُؤۡمِنۡۢ بِاللّٰهِ فَقَدِ اسۡتَمۡسَكَ بِالۡعُرۡوَۃِ الۡوُثۡقٰی ٭ لَا انۡفِصَامَ لَهَا ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ

২৫৬। দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে কেন জোর-জবরদস্তি নেই; সত্য পথ সুস্পষ্ট হয়েছে ভ্রান্ত পথ থেকে। অতএব, যে তাগুতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহর উপর ঈমান আনবে সে এমন এক দৃঢ়তর রজ্জু ধারন করল যা কখনো ভাঙ্গবে না। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী

এই আয়াতে ০৪ টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

১। ইসলাম গ্রহনে জবরদস্তি নেই।

২। মিথ্যা থেকে সত্য আলাদা

৩। তাগুতকে অস্বীকার করা

৪। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা

১। ইসলাম গ্রহনে জবরদস্তি নেই।

لَاۤ اِكۡرَاهَ فِی الدِّیۡنِ

দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে কেন জোর-জবরদস্তি নেই

কাউকে জোর করে ইসলাম গ্রহণ করানো বৈধ নয়। ইসলাম এমন সত্য দ্বীন, যার হক ও বাতিল পরিস্কার—তাই কেউ চাইলে নিজের অন্তরের বিশ্বাস থেকে গ্রহণ করবে। জোর করে বলালে তা অন্তরের ঈমান হবে না।

এই ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা সুরা ইউনুছ এর ৯৯ নং আয়াতে বলেছেন।

وَ لَوۡ شَآءَ رَبُّكَ لَاٰمَنَ مَنۡ فِی الۡاَرۡضِ كُلُّهُمۡ جَمِیۡعًا ؕ اَفَاَنۡتَ تُكۡرِهُ النَّاسَ حَتّٰی یَكُوۡنُوۡا مُؤۡمِنِیۡنَ

আর আপনার রব ইচ্ছে করলে যমীনে যারা আছে তারা সবাই ঈমান আনত; তবে কি আপনি মুমিন হওয়ার জন্য মানুষের উপর জবরদস্তি করবেন?

সুরা ইয়াসিনের ১৭ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা রাসুল সঃ কে বলেন

وَ مَا عَلَیۡنَاۤ اِلَّا الۡبَلٰغُ الۡمُبِیۡنُ

আর স্পষ্টভাবে প্রচার করাই আমাদের দায়িত্ব

২। মিথ্যা থেকে সত্য আলাদা

قَدۡ تَّبَیَّنَ الرُّشۡدُ مِنَ الۡغَیِّ

সত্য পথ সুস্পষ্ট হয়েছে ভ্রান্ত পথ থেকে

সত্য মিথ্যা। দুটি শব্দই দুই অক্ষরের। কিন্তু দুই শব্দের মাঝে ব্যবধান রাত দিনের, আলো আঁধারের। সত্য আলো, মিথ্যা অন্ধকার। সত্য জান্নাতের পথ, মিথ্যা জাহান্নামের পথ। সত্য পূণ্যের পথ দেখায়, মিথ্যা পাপের পথে নিয়ে যায়।  সত্যকে সবাই ভালবাসে, মিথ্যাকে ঘৃণা করে। সত্যবাদী সবার প্রিয়, মিথ্যাবাদীকে কেউ দেখতে পারে না।

এই সম্পর্কে সুরা বনী ইসরাইল এর ৮১ নং আয়াতে বলা হয়েছে

وَ قُلۡ جَآءَ الۡحَقُّ وَ زَهَقَ الۡبَاطِلُ ؕ اِنَّ الۡبَاطِلَ كَانَ زَهُوۡقًا

আর বল, ‘সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলীন হয়েছে; নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল

৩। তাগুতকে অস্বীকার করা

فَمَنۡ یَّكۡفُرۡ بِالطَّاغُوۡتِ

যে তাগুতকে অস্বীকার করবে

পবিত্র কোরআনে মোট আট স্থানে ‘তাগুত’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

তাগুত শব্দটি আরবী (তুগইয়ান) শব্দ থেকে উৎসারিত, যার অর্থ সীমালংঘন করা, বাড়াবাড়ি করা, স্বেচ্ছাচারিতা।

তাগুত হচ্ছে ঐসব ব্যক্তি, যারা মানুষকে আল্লাহ ব্যতীত নিজেদের আনুগত্যের দিকে আহ্বান করে এবং আল্লাহর আইনের বিপরীতে নিজেরাই আইন তৈরি করে মানুষকে তা মেনে চলতে বাধ্য করে।

ঈমান আনার পূর্ব শর্ত হলো তাগুতকে অস্বীকার করা। এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করে বলেছেন আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার পূর্বে তাগুতকে অস্বীকার করতে হবে। কেউ যদি তাগুতকে অস্বীকার না করে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার চেষ্টা করে সে বিভ্রান্ত হতে হবে। 

সুরা নিসার ৬০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন

اَنۡ یَّتَحَاكَمُوۡۤا اِلَی الطَّاغُوۡتِ وَ قَدۡ اُمِرُوۡۤا اَنۡ یَّكۡفُرُوۡا بِهٖ ؕ

অথচ তারা তাগূতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়; যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সুরা নাহলের ৩৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে

وَ لَقَدۡ بَعَثۡنَا فِیۡ كُلِّ اُمَّۃٍ رَّسُوۡلًا اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰهَ وَ اجۡتَنِبُوا الطَّاغُوۡتَ ۚ

অবশ্যই আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রসূল পাঠিয়েছি এই নির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর ও তাগূত থেকে দূরে থাক।

তাগুত সম্পর্কে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব (রহ.) তাঁর ‘মাজমুআহ আততাওহিদ’ কিতাবের, পৃষ্ঠা ১৪ ও ১৫-তে লিখেছেন,

তাগুতপ্রধানত পাঁচ প্রকার।

এক নং তাগুতঃ শয়তান। 

শয়তান অর্থ বিতাড়িত, বিদূরিত, বঞ্চিত ইত্যাদি। শয়তান হক থেকে বিদূরিত এবং কল্যান থেকে বঞ্চিত বলে তাকে শতয়তান বলা হয়।

‘শয়তান’ হচ্ছে একটি বৈশিষ্ট্যগত নাম। তার নাম ছিল ইবলিস, তাকে ইবলিস ও বলা হয়। ইবলিসকে তার জ্ঞান এবং যোগ্যতার জন্য ফেরেশতা উপাধি দেয়া হয় আর তার নতুন নাম দেয়া হয় আজাজিল (“আল্লাহ্‌ শক্তিদানকারী”)

শয়তান সম্পর্কে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনের সুরা : ইয়াসিন, আয়াত – ৬০ এ বলেছেনঃ

اَلَمۡ اَعۡهَدۡ اِلَیۡکُمۡ یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ اَنۡ لَّا تَعۡبُدُوا الشَّیۡطٰنَ ۚ اِنَّهٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ

“হে বনী আদম! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের ইবাদাত করো না, কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?”

দুই নং তাগুত. আল্লাহর বিধান পরিহারকারী অত্যাচারী শাসক।

সুরা : নিসা, আয়াত : ৬০

یُرِیۡدُوۡنَ اَنۡ یَّتَحَاکَمُوۡۤا اِلَی الطَّاغُوۡتِ وَ قَدۡ اُمِرُوۡۤا اَنۡ یَّکۡفُرُوۡا بِهٖ

“তারা তাগূতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায় অথচ তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাকে অস্বীকার করত”

যে সব মানুষ অন্য মানুষের প্রতি অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার করে তাদেরকে জালেম বা অত্যাচারী বলা হয়। পৃথিবীতে অত্যাচারীর সংখ্যা যত বেশিই হোক না কেন, কেউ নিজেকে কখনো অত্যাচারী বলে স্বীকার করে না।

উল্টো দেখা যায়, অত্যাচারী নিজেকে মহামানব বলে দাবী করছে। সাধারণত অত্যাচারী ব্যক্তি ক্ষমতাবান হয়ে থাকে, বিধায় তাকে কেউ অত্যাচারী বলার দুঃসাহস করে না। এ কারণে অত্যাচার কী— তা যেমন বোঝা মুশকিল তেমনি অত্যাচারীকে চেনাও কঠিন বিষয়। তবে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমের বিভিন্ন জায়গায় অত্যাচারীর বিভিন্ন রূপ প্রকাশ করে বিশ্ববাসীর সামনে অত্যাচারী লোকদের মুখোশ খুলে দিয়েছেন। প্রকাশ করে দিয়েছেন অত্যাচারীর পরিচয়।

তিন নং তাগুত. যে ব্যক্তি আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান অনুসারে ফয়সালা করে না।

সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৪৪)

فَلَا تَخۡشَوُا النَّاسَ وَ اخۡشَوۡنِ وَ لَا تَشۡتَرُوۡا بِاٰیٰتِیۡ ثَمَنًا قَلِیۡلًا ؕ وَ مَنۡ لَّمۡ یَحۡکُمۡ بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡکٰفِرُوۡنَ

“তোমরা মানুষকে ভয় করো না, আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে সামান্য মূল্য ক্রয় করো না। আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে ফয়সালা করে না, তারাই কাফির”। 

চার নং তাগুত. যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য ইলমে গায়েব এর জ্ঞান সাব্যস্ত করে।

(সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৯)

وَ عِنۡدَهٗ مَفَاتِحُ الۡغَیۡبِ لَا یَعۡلَمُهَاۤ اِلَّا هُوَ ؕ وَ یَعۡلَمُ مَا فِی الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ

‘অদৃশ্যের চাবিগুলো তাঁর কাছেই রয়েছে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। জলে ও স্থলে যা কিছু আছে, তা তিনিই অবগত’

পাঁচ নং তাগুত. আল্লাহর পরিবর্তে যার উপাসনা করা হয় এবং সে ওই উপাসনায় সন্তুষ্ট থাকে।

আল্লাহ তায়ালা বলেছেন সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ২৯

وَ مَنۡ یَّقُلۡ مِنۡهُمۡ اِنِّیۡۤ اِلٰهٌ مِّنۡ دُوۡنِهٖ فَذٰلِکَ نَجۡزِیۡهِ جَهَنَّمَ ؕ کَذٰلِکَ نَجۡزِی الظّٰلِمِیۡنَ

“আর তাদের মধ্যে যে বলবে, তিনি ব্যতীত আমিই ইলাহ, তাকে আমরা জাহান্নামের শাস্তির প্রতিদান দেব; এভাবেই আমরা যালেমদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি”

আল্লাহর পরিবর্তে যদি কোন কিছুর ইবাদাত বা উপসনা করা হয়, তা মানুষ হোক বা অন্য কিছু। তাহলে সেটি হবে শিরক।

৪। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা

وَ یُؤۡمِنۡۢ بِاللّٰهِ فَقَدِ اسۡتَمۡسَكَ بِالۡعُرۡوَۃِ الۡوُثۡقٰی ٭ لَا انۡفِصَامَ لَهَا ؕ وَ اللّٰهُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ

আল্লাহর উপর ঈমান আনবে সে এমন এক দৃঢ়তর রজ্জু ধারন করল যা কখনো ভাঙ্গবে না। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী

আল্লহর প্রতি ইমান আনা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা নিজেই উল্লেখ করেছেন-

সুরা আল ইমরান আয়াত নং ১৯৩

رَبَّنَاۤ اِنَّنَا سَمِعۡنَا مُنَادِیًا یُّنَادِیۡ لِلۡاِیۡمَانِ اَنۡ اٰمِنُوۡا بِرَبِّکُمۡ فَاٰمَنَّا

“হে আমাদের রব, আমরা এক আহবায়ককে ঈমানের দিকে আহ্বান করতে শুনেছি, ‘তোমরা তোমাদের রবের উপর ঈমান আন’। কাজেই আমরা ঈমান এনেছি”

আল্লাহর কোন গুন বা বিষয়গুলো আমরা  ঈমান আনবো তা তিনি সুরা ইখলাস এ চমৎকার ভাবে উল্লেখ করেছেন।

সুরা ইখলাস আয়াত ১ থেকে ৪

                       وَ لَمۡ یَکُنۡ لَّهٗ کُفُوًا اَحَدٌ لَمۡ یَلِدۡ وَ لَمۡ یُوۡلَدۡ اَللّٰهُ الصَّمَدُ قُلۡ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ

অর্থ : (হে রাসুল! আপনি) বলুন, তিনিই আল্লাহ, একক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। আর তার সমতুল্য কেউ নেই।’ (সুরা ইখলাস)

আয়াত-২৫৭

اَللّٰهُ وَلِیُّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ۙ یُخۡرِجُهُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ۬ؕ وَ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡۤا اَوۡلِیٰٓـُٔهُمُ الطَّاغُوۡتُ ۙ یُخۡرِجُوۡنَهُمۡ مِّنَ النُّوۡرِ اِلَی الظُّلُمٰتِ ؕ اُولٰٓئِكَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ

আল্লাহ তাদের অভিভাবক যারা ঈমান আনে, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোতে নিয়ে যান। আর যারা কুফরী করে তাগূত তাদের অভিভাবক, এরা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়। তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে

এই আয়াতে ০৪ টি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

১। আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক

২। অবিশ্বাসীদের অভিভাবক তাগুত

৩। অন্ধকার থেকে আলো ও আলো থেকে অন্ধকার

৪। জাহান্নামের অধিবাসী

১। আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক

اَللّٰهُ وَلِیُّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ۙ یُخۡرِجُهُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ

আল্লাহ তাদের অভিভাবক যারা ঈমান আনে, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোতে নিয়ে যান।

এই অংশের অর্থ হলো, যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, আল্লাহ তাদের পথ প্রদর্শক ও সাহায্যকারী। তিনি তাদেরকে অন্ধকার (কুফরী, গোমরাহী) থেকে আলোর (ঈমান, হেদায়াত) দিকে নিয়ে যান।

সুরা আল ইমরানের ৬৮ নং আয়াতে বলেছেন

وَ اللّٰهُ وَلِیُّ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ

আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক

২। অবিশ্বাসীদের অভিভাবক তাগুত

এখানে তাগুত বলতে শয়তান ও অন্যান্য বাতিল উপাস্যদের বোঝানো হয়েছে। যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কিছুর পূজা করে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক নন। বরং তাগুত তাদের পথভ্রষ্ট করে, তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়।

সুরা নিসার ৬০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন

اَنۡ یَّتَحَاكَمُوۡۤا اِلَی الطَّاغُوۡتِ وَ قَدۡ اُمِرُوۡۤا اَنۡ یَّكۡفُرُوۡا بِهٖ ؕ

অথচ তারা তাগূতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়; যদিও তা প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

৩। অন্ধকার থেকে আলো ও আলো থেকে অন্ধকার

এই অংশে মুমিন ও কাফেরদের গন্তব্যের পার্থক্য স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। মুমিনরা আল্লাহর রহমতে অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসে, আর কাফেররা তাগুতের অনুসরণ করে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে ধাবিত হয়।

এখানে দুটি বিষয় স্পষ্ট: ১। মুমিন: কুফর-শিরক-অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে ঈমান, জ্ঞান ও হেদায়াতের আলোতে আসে।

২। কাফের: আল্লাহর পাঠানো নূর (কুরআন, ঈমান, সত্য) থেকে সরিয়ে গোমরাহির অন্ধকারে চলে যায়।

অন্ধকার (الظلمات) কী?

  • কুফর ও শিরক
  • গোমরাহী ও অজ্ঞতা
  • মুনাফিকি ও সন্দেহ
  • জাহান্নামের পথ

🌕 আলো (النور) কী?

  • ঈমান ও তাওহীদ
  • কুরআন ও হিদায়াত
  • ইলম (সত্য জ্ঞান)
  • জান্নাতের পথ

সুরা ইবরাহীমের ০১ নং আয়াতে বলা হয়েছে।

الٓرٰ ۟ كِتٰبٌ اَنۡزَلۡنٰهُ اِلَیۡكَ لِتُخۡرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ ۬ۙ بِاِذۡنِ رَبِّهِمۡ اِلٰی صِرَاطِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَمِیۡدِ

আলিফ-লাম্-রা, এ কিতাব, আমরা এটা আপনার প্রতি নাযিল করেছি যাতে আপনি মানুষদেরকে তাদের রবের অনুমতিক্রমে বের করে আনতে পারেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে পরাক্রমশালী, সর্বপ্রশংসিতের পথের দিকে

৪। জাহান্নামের অধিবাসী

اُولٰٓئِكَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ

তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে

যারা তাগুতের অনুসরণ করে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী হবে এবং সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে।

সুরা বাকারার ৩৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে।

 وَ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا وَ كَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَاۤ اُولٰٓئِكَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ

আর যারা কুফরী করেছে এবং আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করেছে তারাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।

শিক্ষা

১। ইসলাম গ্রহণে কারো উপর জোরজবরদস্তি নেই।

২। সত্য (ইসলাম) ও মিথ্যা (কুফর, শিরক) পরিষ্কারভাবে আলাদা হয়ে গেছে।

৩। প্রকৃত ঈমান হলো তাগুতকে অস্বীকার করা এবং আল্লাহকে একমাত্র উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করা।

৪। যে ইসলাম আঁকড়ে ধরে, সে নিরাপদ।

About Md Nazmul Azam

I am website developer.

Check Also

ইমামদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ন কথা

ইমামদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ন কথা (পাঠ-০২) (যা না পড়লে বইটি সঠিক ভাবে বুঝা সম্ভব হবে না) …

আল্লাহর পথে দাওয়াত বিষয়ে আলোচনা

পিডিএফ ডাউনলোড করুন দাওয়াত সূরা নাহল :  আয়াত ১২৫ ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ …

দলিলভিত্তিক ইবাদত ও জীবনপথ বইয়ের লেখকের বানী

দলিলভিত্তিক ইবাদত ও জীবনপথ (পাঠ-০১) নাজমুল আযম শামীম আমি নাজমুল আযম শামীম, প্রতিষ্ঠাতা- ইসলামিক দাওয়া …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *