জিহাদ ও যুদ্ধের পার্থক্য
আজকে জিহাদ এবং ক্বিতাল শব্দ দুটোর ব্যাপক অপব্যবহার করা হচ্ছে। একদল সংগঠন কু’রআনের আয়াতগুলোতে জিহাদ এবং ক্বিতালের মধ্যে পার্থক্য না করে, জিহাদের জায়গায় ক্বিতাল করার প্রচারণা চালাচ্ছে। আরেকদল সংগঠন ক্বিতালের আয়াতগুলোকে সাধারণ জিহাদ অনুবাদ করে স্পষ্ট প্রতিরোধ এবং যুদ্ধের জায়গায় চুপচাপ বসে অপেক্ষা করা এবং অন্যায়ের সাথে আপোষ করে চলার জন্য প্রচারণা করছে।
এই দুই পক্ষই দাবি করে যে, যেহেতু জিহাদ এবং ক্বিতাল সমার্থক শব্দ, তাই এই শব্দ দুটোকে একে অপরের জায়গায় বদল করা যায়। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, এরা আয়াতগুলোতে জিহাদের জায়গায় ক্বিতাল এবং ক্বিতালের জায়গায় জিহাদ সুবিধামত বসিয়ে, তাদের ইচ্ছেমত অনুবাদ এবং ব্যাখ্যা করে, যেন তারা তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে পারে। একারণে যখনই যুদ্ধ, সংগ্রাম, হত্যা ইত্যাদি সম্পর্কে কোনো আয়াত বা হাদিস পাবেন, প্রথমেই দেখে নেবেন আরবিতে শব্দটা কি জিহাদ নাকি ক্বিতাল।
কু’রআনে আল্লাহ ﷻ অত্যন্ত সূক্ষ্ম আরবি ব্যবহার করেছেন। প্রতিটি শব্দ বেছে নেওয়া হয়েছে এমনভাবে যে, সেই শব্দ ছাড়া অন্য কোনো সমার্থক শব্দ ব্যবহার করলে সেই আয়াতের অর্থ বিকৃত করা যাবে, মানুষ ভুল কাজ করে ফেলবে। জিহাদের আয়াতে ক্বিতালের অর্থ করলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ক্বিতালের আয়াতে জিহাদের অর্থ করলেও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে না, শান্তি আসবে না, মুসলিমদের অবস্থার পরিবর্তন হবে না। আরবিতে শব্দের সংখ্যা বিশাল। বেশিরভাগ শব্দের অনেকগুলো অর্থ হয় এবং অনেকগুলো সমার্থক শব্দ রয়েছে। কিন্তু একটা ব্যাপার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, আরবিতে দুটো শব্দের ঠিক একই অর্থ হয় না, যদিও কিনা তারা সমার্থক। সমার্থক শব্দগুলোর অর্থের মধ্যে অবশ্যই কোনো না কোনো পার্থক্য রয়েছে। দুটো শব্দ কখনো সব ক্ষেত্রে ঠিক একই অর্থ বহন করে না।[মুতারাদিফাতুল কু’রআন]
যেমন ধরুন ‘প্রতিরোধ’ এবং ‘বিরোধিতা’ সমার্থক শব্দ। কিন্তু তাই বলে কি আমরা যেকোনো বাক্যে প্রতিরোধ-এর জায়গায় বিরোধিতা ব্যবহার করতে পারি? যেমন, “আমি এই ব্যাপারে তোমার বিরোধিতা করবো।” — একে যদি কেউ লেখে, “আমি এই ব্যাপারে তোমাকে প্রতিরোধ করবো।” — তাহলে এই দুই বাক্যের অর্থ পাল্টে যাবে। প্রথমটায় শান্তিপূর্ণ, নিরস্ত্র বিরোধিতা করার সুযোগ থাকবে, দ্বিতীয়টি হবে বল প্রয়োগ করে প্রতিরোধ করা।
ঠিক একইভাবে যেই আয়াতে জিহাদ শব্দ এসেছে, সেই আয়াতকে যখন ক্বিতালের আয়াত বানিয়ে ফেলা হবে, তখন মুসলিমরা যেই প্রেক্ষাপটে মারামারি ছাড়াও অন্য পথ নেওয়ার সুযোগ ছিল, সেখানে মারামারি করাটাই একমাত্র পথ হিসেবে নেবে। তখন হঠাৎ করে কু’রআনে বহু আয়াত হয়ে যাবে শুধুই মারামারি, যুদ্ধ করার আয়াত, অন্য কোনো ধরনের প্রতিরোধ, প্রতিবাদ করার আয়াত নয়। অথচ দেখা যাবে, সেই আয়াতগুলোতে আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে জিহাদ শব্দ ব্যবহার করে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিরোধিতা, প্রতিরোধ, প্রতিরক্ষা করার আদেশ দিয়েছেন, যার অধিকাংশই হয়তো সশস্ত্র জিহাদ নয়।
জিহাদ ও যুদ্ধ এক জিনিস নয়। এ দু’টি ভিন্ন জিনিস। জিহাদের ভিতরে যুদ্ধ থাকতে পারে, আর যুদ্ধই জিহাদের চুড়ান্ত স্তর। তবে, যুদ্ধ সবসময় জিহাদ বলে গণ্য হয় না। জিহাদের একটি অংশ ও চুড়ান্ত স্তর হল যুদ্ধ। অন্য কথায় আমরা বলতে পারি, কিছু কিছু যুদ্ধকে জিহাদ বলা যায়, তবে সব যুদ্ধকে জিহাদ বলা যায় না। কেননা, অনেক সময় মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করা লাগে। সেটা মোটেই জিহাদ নয়। আমরা অনেক সময় নিজের স্বার্থের জন্য যুদ্ধ করি সেটি কখনও জিহাদ হতে পারেনা।
নিজের স্বার্থের জন্য যুদ্ধ করে মৃত্যুবরণ করা মানুষকে শহিদ বলা প্রশ্নবিধ!
ISLAMIC DAWAH FOUNDATION The truth is revealed to Islam