Monday , June 30 2025

সুরা বাকারা আয়াত ০১-০৫ দারস

সুরা বাকারা আয়াত ০১-০৫ দারস

الٓـمّٓ ۚ﴿۱﴾ ذٰلِكَ الۡكِتٰبُ لَا رَیۡبَ ۚۖۛ فِیۡهِ ۚۛ هُدًی لِّلۡمُتَّقِیۡنَ ۙ﴿۲﴾ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡغَیۡبِ وَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ ۙ﴿۳﴾ وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡكَ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ مِنۡ قَبۡلِكَ ۚ وَ بِالۡاٰخِرَۃِ هُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ ؕ﴿۴﴾ اُولٰٓئِكَ عَلٰی هُدًی مِّنۡ رَّبِّهِمۡ ٭ وَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ﴿۵﴾

আলিফ-লাম-মীম। এটা সে কিতাব; যাতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হেদায়াত। যারা গায়েবের প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে এবং তাদেরকে আমরা যা দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে। আর যারা ঈমান আনে তাতে, যা আপনার উপর নাযিল করা হয়েছে এবং যা আপনার পূর্বে নাযিল করা হয়েছে, আর যারা আখেরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী। তারাই তাদের রব-এর নির্দেশিত হেদায়াতের উপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম।

নামকরণ:

বাকারাহ মানে গাভী। এ সূরার ৬৭ থেকে ৭৩ নম্বর আয়াত পর্যন্ত হযরত মুসা (আঃ) এর সময়কার বনি ইসরাইল এর গাভী কুরবানীর ঘটনা উল্লেখ থাকার কারণে এর এই নামকরণ করা হয়েছে।

নাযিলের সময়-কাল

এ সূরার বেশীর ভাগ মদীনায় হিজরাতের পর মাদানী জীবনের একেবারে প্রথম যুগে নাযিল হয় । আর এর কম অংশ পরে নাযিল হয় । বিষয়স্তুর সাথে সামঞ্জস্য ও সাদৃশ্যের সম্পর্কিত যে আয়াতগুলো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের একেবারে শেষ পর্যায়ে নাযিল হয় সেগুলোও এখানে সংযোজিত করা হয়েছে । যে আয়াতগুলো দিয়ে সূরাটি শেষ করা হয়েছে সেগুলো হিজরাতের আগে মক্কায় নাযিল হয় । কিন্তু বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্যের কারণে সেগুলোকেও এ সূরার সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে ।

 

শানে নুযুল

ইহুদি ও মুনাফিকদের সংশোধন ও সতর্ককরণ:

  • মদীনায় হিজরতের পর রাসূল (সা.)-কে মুখোমুখি হতে হয় ইহুদি সম্প্রদায় ও মুনাফিকদের বিরোধিতার।
    • সুরা বাকারার বহু আয়াত এই ইহুদি সম্প্রদায়ের কপটতা, আহকার, কিতাব বিকৃতি, এবং নবী খুন করার ইতিহাস তুলে ধরে তাদের সতর্ক করে।

নবনির্মিত মুসলিম উম্মাহর জন্য আইন-কানুন ও আদর্শ নির্ধারণ:

  • নামায, রোযা, হজ, যাকাত, তালাক, বিয়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত বিধান এসেছে।
    • মুসলমানদের একটি পূর্ণাঙ্গ জাতি হিসেবে গঠন ও তাদেরকে “উম্মাতান ওসাতা” (মাঝারি ও উত্তম জাতি) হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

কিবলা পরিবর্তনের পটভূমি:

  • প্রাথমিকভাবে মুসলিমরা বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায আদায় করতেন, কিন্তু পরবর্তীতে কিবলা কাবা শরীফের দিকে পরিবর্তন করা হয় (আয়াত 144)। এটি একটি বিশিষ্ট ঘটনা এবং মুসলিম পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বনী ইস্রাঈলের ইতিহাস শিক্ষা হিসেবে বর্ণিত:

  • মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করার জন্য পূর্ববর্তী জাতি—বনী ইস্রাঈলের অবাধ্যতা, নেয়ামতের অবমূল্যায়ন ও দ্বীন থেকে বিচ্যুতির উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে।

১ম আয়াত

الٓـمّٓ- আলিফ-লাম-মীম

আলিফ, লাম, মীমঃ এ হরফগুলোকে কুরআনের পরিভাষায় হরফে মুকাত্তা’আত’ বলা হয়। উনত্রিশটি সূরার প্রারম্ভে এ ধরনের হরফে মুকাত্তা’আত ব্যবহার করা   হয়েছে।

এ ব্যাপারে মুফাসসিরগণের মধ্যে বিভিন্ন মত রয়েছে। এক্ষেত্রে সর্বমোট প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে চারটি:

১) এগুলোর কোন অর্থ নেই, কেবলমাত্র আরবী বর্ণমালার হরফ হিসেবে এগুলো পরিচিত।

২) এগুলোর অর্থ আছে কিনা তা আল্লাহই ভাল জানেন, আমরা এগুলোর অর্থ সম্পর্কে কিছুই জানিনা। আমরা শুধুমাত্র তিলাওয়াত করবো।

৩) এগুলোর নির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে, কারণ কুরআনের কোন বিষয় বা কোন আয়াত বা শব্দ অর্থহীনভাবে নাযিল করা হয়নি। কিন্তু এগুলোর অর্থ শুধুমাত্র আল্লাহ তা’আলাই জানেন। অন্য কেউ এ আয়াতসমূহের অর্থ জানেনা, যদি কেউ এর কোন অর্থ নিয়ে থাকে তবে তা সম্পূর্ণভাবে ভুল হবে। আমরা শুধু এতটুকু বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ্ তা’আলা তার কুরআনের কোন অংশ অনর্থক নাযিল করেননি।

৪) এগুলো মুতাশাবিহাত বা অস্পষ্ট বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত। এ হিসাবে অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও ওলামার মধ্যে সর্বাধিক প্রচলিত মত হচ্ছে যে, হরফে মুকাত্তা’আতগুলো এমনি রহস্যপূর্ণ যার প্রকৃত মর্ম ও মাহাত্ম্য একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই জানেন। কিন্তু মুতাশবিহাত আয়াতসমূহের প্রকৃত অর্থ আল্লাহ্ তা’আলার কাছে থাকলেও গভীর জ্ঞানের অধিকারী আলেমগণ এগুলো থেকে হেদায়াত গ্রহণ করার জন্য এগুলোর বিভিন্ন অর্থ করেছেন। কোন কোন তাফসীরকারক এ হরফগুলোকে সংশ্লিষ্ট সূরার নাম বলে অভিহিত করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন যে, এগুলো আল্লাহর নামের তত্ত্ব বিশেষ। 

২য় আয়াত

ذٰلِكَ الۡكِتٰبُ لَا رَیۡبَ ۚۖۛ فِیۡهِ ۚۛ هُدًی لِّلۡمُتَّقِیۡنَ

এটা সে কিতাব; যাতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হেদায়াত

ذَٰلِكَ  শব্দের অর্থ- ঐটা, সাধারণতঃ কোন দূরবতী বস্তুকে ইশারা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

এ কিতাবের অবতরণ যে আল্লাহর নিকট থেকে এ ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, সুরা আস সাজদাহ-০২

 تَنۡزِیۡلُ الۡكِتٰبِ لَا رَیۡبَ فِیۡهِ مِنۡ رَّبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ

এ কিতাব সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া, এতে কোন সন্দেহ নেই।

‘মুত্তাকীন’ শব্দটি ‘মুত্তাকী’-এর বহুবচন। মুত্তাকী শব্দের মূল ধাতু তাকওয়া। তাকওয়া হলো, নিরাপদ থাকা, নিরাপত্তা বিধান করা। শরীআতের পরিভাষায় তাকওয়া হলো, বান্দা যেন আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে, আর তা করতে হলে যা করতে হবে তা হলো, তাঁর নির্দেশকে পুরোপুরি মেনে নেয়া, এবং তাঁর নিষেধকৃত বস্তুকে পুরোপুরি ত্যাগ করা। আর মুত্তাকী হলেন, যিনি আল্লাহর আদেশকে পুরোপুরি মেনে নিয়ে এবং তার নিষেধ থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থেকে তাঁর অসন্তুষ্টি ও শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন।

বর্ণিত আছে যে, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তাকওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আপনি কি কখনো কাঁটাযুক্ত পথে চলেছেন? তিনি বললেন, অবশ্যই। উবাই বললেন, কিভাবে চলেছেন? উমর বললেন, কাপড় গুটিয়ে অত্যন্ত সাবধানে চলেছি। উবাই বললেনঃ এটাই হলো, তাকওয়া।

তবে প্রশ্ন হতে পারে যে, মুত্তাকীগণকে কেন হেদায়াত প্রাপ্তির জন্য নির্দিষ্ট করেছেন? এ ব্যাপারে আলেমগণ বলেন, মূলতঃ মুত্তাকীরাই আল্লাহর কুরআন থেকে হেদায়াত লাভ করতে পারেন, অন্যান্য যারা মুত্তাকী নন তারা হেদায়াত লাভ করতে পারেন না। যদিও কুরআন তাদেরকে সঠিক পথের দিশা দেন। আর পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াত এ অর্থের উপর প্রমাণবহ। আল্লাহ বলেন, সুরা বনী ইসরাঈল আয়াত-০৯

 اِنَّ هٰذَا الۡقُرۡاٰنَ یَهۡدِیۡ لِلَّتِیۡ هِیَ اَقۡوَمُ وَ یُبَشِّرُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ الَّذِیۡنَ یَعۡمَلُوۡنَ الصّٰلِحٰتِ اَنَّ لَهُمۡ اَجۡرًا كَبِیۡرًا

নিশ্চয় এ কুরআন এমন পথনির্দেশ করে, যা সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সৎকর্মপরায়ণ বিশ্বাসীদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার

মুত্তাকী কারা তাদের পরিচয় আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারার ৩ ও ৪ নং আয়াতে তুলে ধরেছেন। এখানে তাদের ০৬টি বৈশিষ্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

১। তারা গায়েব এর প্রতি ইমান আনবেন

২। তারা সালাত কায়েম করবেন

৩। তারা তাদের দেওয়া রিজিক থেকে ব্যয় করবেন।

৪। তারা এই কুরআনের প্রতি ঈমান আনবেন।

৫। তারা পূর্বের সকল আসমানী কিতাবের উপর ঈমান আনবেন।

৬। তারা আখেরাত এর উপরে নিশ্চিত বিশ্বাসী হবেন।

১। তারা গায়েব এর প্রতি ইমান আনবেন

সুরা বাকারা আয়াত-০৩

وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡكَ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ مِنۡ قَبۡلِكَ ۚ وَ بِالۡاٰخِرَۃِ هُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ

যারা গায়েবের প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে এবং তাদেরকে আমরা যা দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে।

غيب  এর অর্থ হচ্ছে এমন সব বস্তু যা বাহ্যিকভাবে মানবকুলের জ্ঞানের ঊর্ধ্বে এবং যা মানুষ পঞ্চ-ইন্দ্রিয়ের দ্বারা অনুভব করতে পারে না, চক্ষু দ্বারা দেখতে পায় না, কান দ্বারা শুনতে পায় না, নাসিকা দ্বারা ঘ্রাণ নিতে পারে না, জিহবা দ্বারা স্বাদ গ্রহণ করতে পারে না, হাত দ্বারা স্পর্শ করতে পারে না, ফলে সে সম্পর্কে জ্ঞান লাভও করতে পারে না। কুরআনে غيب  শব্দ দ্বারা সে সমস্ত বিষয়কেই বোঝানো হয়েছে যেগুলোর সংবাদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন এবং মানুষ যে সমস্ত বিষয়ে স্বীয় বুদ্ধিবলে ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জ্ঞান লাভে সম্পূর্ণ অক্ষম। এখানে  غيب শব্দ দ্বারা ঈমানের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে আল্লাহর অস্তিত্ব ও সত্তা, সিফাত বা গুণাবলী এবং তাকদীর সম্পর্কিত বিষয়সমূহ, জান্নাত-জাহান্নামের অবস্থা, কেয়ামত এবং কেয়ামতে অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘটনাসমূহ, ফেরেশতাকুল, সমস্ত আসমানী কিতাব, পূর্ববর্তী সকল নবী ও রাসূলগণের বিস্তারিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত যা সূরা আল-বাকারার ২৮৫ নং আয়াতে ঈমানের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।

اٰمَنَ الرَّسُوۡلُ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡهِ مِنۡ رَّبِّهٖ وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ؕ كُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ مَلٰٓئِكَتِهٖ وَ كُتُبِهٖ وَ رُسُلِهٖ ۟ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ اَحَدٍ مِّنۡ رُّسُلِهٖ ۟ وَ قَالُوۡا سَمِعۡنَا وَ اَطَعۡنَا ٭۫ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَ اِلَیۡكَ الۡمَصِیۡرُ

রাসূল তার প্রভুর পক্ষ থেকে যা তার কাছে নাযিল করা হয়েছে তার উপর ঈমান এনেছেন এবং মুমিনগণও। প্রত্যেকেই ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তার ফেরেশতাগণ, তার কিতাবসমূহ এবং তার রাসূলগণের উপর। আমরা তাঁর রাসূলগনের কারও মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলেঃ আমরা শুনেছি ও মেনে নিয়েছি। হে আমাদের রব। আপনার ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল।

গায়েব এর বিষয়গুলোর প্রতি ঈমান আনার ব্যাপারে সহীহ মুসলিম এর ০৮ নং হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।

وَقَالَ يَا مُحَمَّدُ أَخْبِرْنِي عَنِ الإِسْلاَمِ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ الإِسْلاَمُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلاً ‏.‏ قَالَ صَدَقْتَ ‏.‏ قَالَ فَعَجِبْنَا لَهُ يَسْأَلُهُ وَيُصَدِّقُهُ ‏.‏ قَالَ فَأَخْبِرْنِي عَنِ الإِيمَانِ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ صَدَقْتَ ‏.‏ قَالَ فَأَخْبِرْنِي عَنِ الإِحْسَانِ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ ‏”

হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে ইসলাম সম্বন্ধে বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ইসলাম হচ্ছে এই– তুমি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ (মাবূদ) নেই, এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়িম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমযানের সওম পালন করবে এবং যদি পথ অতিক্রম করার সামর্থ্য হয় তখন বাইতুল্লাহর হজ্জ করবে। সে বললো, আপনি সত্যই বলেছেন। বর্ণনাকারী উমর (রাযিঃ) বলেন, আমরা তার কথা শুনে আশ্চর্যাম্বিত হলাম। কেননা সে (অজ্ঞের ন্যায়) প্রশ্ন করছে আর (বিজ্ঞের ন্যায়) সমর্থন করছে।

এরপর সে বললো, আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ঈমান এই যে, তুমি আল্লাহ, তার ফেরেশতাকুল, তার কিতাবসমূহ, তার প্রেরিত নবীগণ ও শেষ দিনের উপর ঈমান রাখবে এবং তুমি তাকদীর ও এর ভালো ও মন্দের প্রতিও ঈমান রাখবে। সে বললো, আপনি সত্যই বলেছেন।

এবার সে বললো, আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ইহসান এই যে, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে যেন তাকে দেখছো, যদি তাকে না দেখো তাহলে তিনি তোমাকে দেখছেন বলে অনুভব করবে।

২। তারা সালাত কায়েম করবেন

সালাত’-এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে প্রার্থনা বা দো’আ। শরীআতের পরিভাষায় সে বিশেষ ইবাদাত, যা আমাদের নিকট ‘নামায’ হিসেবে পরিচিত। কুরআনুল কারীমে যতবার সালাতের তাকীদ দেয়া হয়েছে – সাধারণতঃ ‘ইকামত’ শব্দের দ্বারাই দেয়া হয়েছে। সালাত আদায়ের কথা শুধু দু’এক জায়গায় বলা হয়েছে। এ জন্য ইকামাতুস সালাত (সালাত প্রতিষ্ঠা)-এর মর্ম অনুধাবন করা উচিত। ‘ইকামত’ এর শাব্দিক অর্থ সোজা করা, স্থায়ী রাখা। সাধারণতঃ যেসব খুঁটি, দেয়াল বা গাছ প্রভৃতির আশ্রয়ে সোজাভাবে দাঁড়ানো থাকে, সেগুলো স্থায়ী থাকে এবং পড়ে যাওয়ার আশংকা কম থাকে। এজন্য ‘ইকামত’ স্থায়ী ও স্থিতিশীল অর্থেও ব্যবহৃত হয়।

কুরআন ও সুন্নাহর পরিভাষায় ইকামাতুস সালাত অর্থ, নির্ধারিত সময় অনুসারে যাবতীয় শর্তাদি ও নিয়মাবলী রক্ষা করে সালাত আদায় করা। শুধু সালাত আদায় করাকে ‘ইকামাতুস সালাত বলা হয় না। সালাতের যত গুণাবলী, ফলাফল, লাভ ও বরকতের কথা কুরআন হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে, তা সবই ‘ইকামাতুস সালাত’ (সালাত প্রতিষ্ঠা)-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত।

যেমন, কুরআনুল কারীমে আছে – সূরা আল-আনকাবুত: ৪৫

اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡكَرِ ؕ

নিশ্চয়ই সালাত মানুষকে যাবতীয় অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে

বস্তুত: সালাতের এ ফল ও ক্রিয়ার তখনই প্রকাশ ঘটবে, যখন সালাত উপরে বর্ণিত অর্থে প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ জন্য অনেক সালাত আদায়কারীকে অশ্লীল ও নক্ক্যারজনক কাজে জড়িত দেখে এ আয়াতের মৰ্ম সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করা ঠিক হবে না। কেননা, তারা সালাত আদায় করেছে বটে, কিন্তু প্রতিষ্ঠা করেনি। সুতরাং সালাতকে সকল দিক দিয়ে ঠিক করাকে প্রতিষ্ঠা করা বলা হবে। ইকামত অর্থে সালাতে সকল ফরয-ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব পরিপূর্ণভাবে আদায় করা, এতে সব সময় সুদৃঢ় থাকা এবং এর ব্যবস্থাপনা সুদৃঢ় করা সবই বোঝায়।

তাছাড়া সময়মত আদায় করা। সালাতের রুকু, সাজদাহ, তিলাওয়াত, খুশু, খুযু ঠিক রাখাও এর অন্তর্ভুক্ত। [ইবনে কাসীর] ফরয-ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল প্রভৃতি সকল সালাতের জন্য একই শর্ত। এক কথায় সালাতে অভ্যস্ত হওয়া ও তা শরীআতের নিয়মানুযায়ী আদায় করা এবং এর সকল নিয়ম-পদ্ধতি যথার্থভাবে পালন করাই ইকামতে সালাত। তন্মধ্যে রয়েছে – জামা’আতের মাধ্যমে সালাত আদায়ের ব্যবস্থা করা। আর তা বাস্তাবায়নের জন্য সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করা। প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয়ভাবে তার তদারকির ব্যবস্থা করা। আল্লাহ তা’আলা ইসলামী কল্যাণ-রাষ্ট্রের যে রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন তার মধ্যে সালাত কায়েম করাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীনদের অন্যতম কর্ম বলে ঘোষণা করে বলেনঃ

সূরা আল-হাজ্জঃ আয়াত ৪১

 اَلَّذِیۡنَ اِنۡ مَّكَّنّٰهُمۡ فِی الۡاَرۡضِ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَوُا الزَّكٰوۃَ وَ اَمَرُوۡا بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ نَهَوۡا عَنِ الۡمُنۡكَرِ ؕ وَ لِلّٰهِ عَاقِبَۃُ الۡاُمُوۡرِ 

“যাদেরকে আমরা যমীনের বুকে প্রতিষ্ঠা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে, সৎকাজের নির্দেশ দিবে এবং অসৎ কাজের নিষেধ করবে”।

৩। তারা তাদের দেওয়া রিজিক থেকে ব্যয় করবেন।

আল্লাহর পথে ব্যয় অর্থে এখানে ফরয যাকাত, ওয়াজিব সদকা এবং নফল দানসদকা প্রভৃতি যা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা হয় সে সবকিছুকেই বোঝানো হয়েছে। কুরআনে সাধারণত ইনফাক নফল দান-সদকার জন্যই ব্যবহৃত হয়েছে। যেখানে ফরয যাকাত উদ্দেশ্য সেসব ক্ষেত্রে ‘যাকাত’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। মুত্তাকীদের গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে প্রথমে গায়েবের উপর ঈমান, এরপর সালাত প্রতিষ্ঠা এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

সুরা আল ইমরান আয়াত-৯২ তে আল্লাহ বলেন-

لَنۡ تَنَالُوا الۡبِرَّ حَتّٰی تُنۡفِقُوۡا مِمَّا تُحِبُّوۡنَ ۬ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ شَیۡءٍ فَاِنَّ اللّٰهَ بِهٖ عَلِیۡمٌ

তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো সওয়াব অর্জন করবে না। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবগত।

সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন কুরআনী নির্দেশের প্রথম সম্বোধিত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রত্যক্ষ সঙ্গী। কুরআনী নির্দেশ পালনের জন্য তারা ছিলেন উম্মুখ। আলোচ্য আয়াত নাযিল হওয়ার পর তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ সহায় সম্পত্তির প্রতি লক্ষ্য করলেন যে, কোনটি তাদের নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয়। এরপর আল্লাহর পথে তা ব্যয় করার জন্যে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আবেদন করতে লাগলেন। মদীনার আনসারগণের মধ্যে আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বেশ ধনী ছিলেন। মসজিদে নববী সংলগ্ন বিপরীত দিকে তার একটি বাগান ছিল, যাতে ‘বীরাহা’ নামে একটি কুপ ছিল। বর্তমানে মসজিদের নববীর বাব আল মাজীদ্দীর বাদশাহ ফাহদ গেট দিয়ে ভিতরে মসজিদে ঢুকার পর পরই সামান্য বাম পার্শ্বে এ স্থানটি পড়ে। পরিচিতির সুবিধার্থে দুই থামের মাঝখানের তিনটি গোল চক্কর দিয়ে তার স্থান নির্দেশ করা আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝে মাঝে এ বাগানে পদার্পণ করতেন এবং বীরহা কুপের পানি পান করতেন। এ কুপের পানি তিনি পছন্দও করতেন।

আবু তালহার এ বাগান অত্যন্ত মূল্যবান, উর্বর এবং তার বিষয়-সম্পত্তির মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রিয় ছিল। আলোচ্য আয়াত নাযিল হওয়ার পর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাজির হয়ে বললেনঃ আমার সব বিষয়-সম্পত্তির মধ্যে বীরহা আমার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয়। আমি এটি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে চাই। আপনি যে কাজে পছন্দ করেন, এটি তাতেই খরচ করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বিরাট মুনাফার এ বাগানটি আমার মতে তুমি স্বীয় আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বন্টন করে দাও। আবু তালহা এ পরামর্শ গ্রহণ করেন।

সুরা আল ইমরান আয়াত-১৩৩ ও ১৩৪

وَ سَارِعُوۡۤا اِلٰی مَغۡفِرَۃٍ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ وَ جَنَّۃٍ عَرۡضُهَا السَّمٰوٰتُ وَ الۡاَرۡضُ ۙ اُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِیۡنَ –  الَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ فِی السَّرَّآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ الۡكٰظِمِیۡنَ الۡغَیۡظَ وَ الۡعَافِیۡنَ عَنِ النَّاسِ ؕ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ

আর তোমরা তীব্র গতিতে চল নিজেদের রবের ক্ষমার দিকে এবং সে জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য। যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে, যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল; আর আল্লাহ মুহসিনদেরকে ভালবাসেন।


৪। তারা এই কুরআনের প্রতি ঈমান আনবেন।

সুরা বাকারা আয়াত-০৪

وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡكَ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ مِنۡ قَبۡلِكَ ۚ وَ بِالۡاٰخِرَۃِ هُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ

আর যারা ঈমান আনে তাতে, যা আপনার উপর নাযিল করা হয়েছে এবং যা আপনার পূর্বে নাযিল করা হয়েছে, আর যারা আখেরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী

সুরা নিসা আয়াত-১৩৬

 یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اٰمِنُوۡا بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ الۡكِتٰبِ الَّذِیۡ نَزَّلَ عَلٰی رَسُوۡلِهٖ وَ الۡكِتٰبِ الَّذِیۡۤ اَنۡزَلَ مِنۡ قَبۡلُ

হে মুমিনগণ! তোমরা ঈমান আন আল্লাহ্র প্রতি, তাঁর রাসূলের প্রতি, এবং সে কিতাবের প্রতি যা আল্লাহ তার রাসূলের উপর নাযিল করেছেন। আর সে গ্রন্থের প্রতিও যা তার পূর্বে তিনি নাযিল করেছেন।

৫। তারা পূর্বের সকল আসমানী কিতাবের উপর ঈমান আনবেন।

সুরা বাকারা আয়াত-০৪

وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡكَ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ مِنۡ قَبۡلِكَ ۚ وَ بِالۡاٰخِرَۃِ هُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ

আর যারা ঈমান আনে তাতে, যা আপনার উপর নাযিল করা হয়েছে এবং যা আপনার পূর্বে নাযিল করা হয়েছে, আর যারা আখেরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী

সুরা বাকারা আয়াত-১৩৬

قُوۡلُوۡۤا اٰمَنَّا بِاللّٰهِ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡنَا وَ مَاۤ اُنۡزِلَ اِلٰۤی اِبۡرٰهٖمَ وَ اِسۡمٰعِیۡلَ وَ اِسۡحٰقَ وَ یَعۡقُوۡبَ وَ الۡاَسۡبَاطِ وَ مَاۤ اُوۡتِیَ مُوۡسٰی وَ عِیۡسٰی وَ مَاۤ اُوۡتِیَ النَّبِیُّوۡنَ مِنۡ رَّبِّهِمۡ ۚ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ اَحَدٍ مِّنۡهُمۡ ۫ۖ وَ نَحۡنُ لَهٗ مُسۡلِمُوۡنَ

তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ্র প্রতি এবং যা আমাদের প্রতি নাযিল হয়েছে এবং যা ইবরাহীম, ইসমা’ঈল, ইসহাক, ইয়া’কুব ও তার বংশধরদের প্রতি নাযিল হয়েছে, এবং যা মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাদের রব এর নিকট হতে দেয়া হয়েছে। আমরা তাদের মধ্যে কোন তারতম্য করি না। আর আমরা তারই কাছে আত্মসমর্পণকারী

৬। তারা আখেরাত এর উপরে নিশ্চিত বিশ্বাসী হবেন।

সুরা বাকারা আয়াত-০৪

وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡكَ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ مِنۡ قَبۡلِكَ ۚ وَ بِالۡاٰخِرَۃِ هُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ

আর যারা ঈমান আনে তাতে, যা আপনার উপর নাযিল করা হয়েছে এবং যা আপনার পূর্বে নাযিল করা হয়েছে, আর যারা আখেরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী

সুরা নামাল আয়াত-০৩

الَّذِیۡنَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوۡنَ الزَّكٰوۃَ وَ هُمۡ بِالۡاٰخِرَۃِ هُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ

যারা সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় আর তারাই আখেরাতে নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে

সুরা আল মুমিনুন আয়াত ১৬

ثُمَّ اِنَّکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ تُبۡعَثُوۡنَ

তারপর কিয়ামতের দিন অবশ্যই তোমরা পুনরুত্থিত হবে।

৫ম আয়াত

সুরা বাকারা আয়াত-০৫

اُولٰٓئِكَ عَلٰی هُدًی مِّنۡ رَّبِّهِمۡ ٭ وَ اُولٰٓئِكَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ

তারাই তাদের রব-এর নির্দেশিত হেদায়াতের উপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম

যারা মুত্তাকী তারাই সফলকাম। এখানে মুত্তাকীদের গুণাগুণ বর্ণনা করার পরে হিদায়াতের জন্য তাদেরকে সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে যে, তারাই তাদের রব-এর দেয়া হিদায়াত পাবে এবং তারাই সফলকাম হবে। আল্লাহর এ ঘোষণার প্রেক্ষিতে সৎলোকেরা জান্নাতে স্থান পাবে। বর্তমান জীবনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও অসমৃদ্ধি, সাফল্য ও ব্যর্থতা আসল মানদণ্ড নয়। বরং আল্লাহর শেষ বিচারে যে ব্যক্তি উত্তীর্ন হবে, সে-ই হচ্ছে সফলকাম। আর সেখানে যে উত্তীর্ন হবে না, সে ব্যর্থ।

সুরা হাশর আয়াত-২০

 لَا یَسۡتَوِیۡۤ اَصۡحٰبُ النَّارِ وَ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ ؕ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ هُمُ الۡفَآئِزُوۡنَ

জাহান্নামের অধিবাসী এবং জান্নাতের অধিবাসী সমান নয়। জান্নাতবাসীরাই তো সফলকাম


শিক্ষাঃ


১) যেহেতু বিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহ তাআলা শুরুতেই বলছেন যে এই কিতাবে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই, তাই এই কিতাব থেকেই আমাদের জীবনের যাবতীয় সমস্যার সমাধান লাভের চেষ্টা করতে হবে।
২) হেদায়াত লাভের জন্য যে গুনাবলী প্রয়োজন, আল্লাহ তা শুরুতেই বলে দিএছেন অর্থাৎ এই গুনাবলী না থাকা মানে আপনি ধ্বংস।তাই ২য় থেকে ৪র্থ আয়াতের দিকে তাকিয়ে একবার নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন আপনার মাঝে গুনাবলী আছে কিনা? না থেকে থাকলে ত্বরিৎ ব্যাবস্থা নিন।


About Md Nazmul Azam

I am website developer.

Check Also

দলিলভিত্তিক ইবাদত ও জীবনপথ বইয়ের লেখকের বানী

দলিলভিত্তিক ইবাদত ও জীবনপথ (পাঠ-০১) নাজমুল আযম শামীম আমি নাজমুল আযম শামীম, প্রতিষ্ঠাতা- ইসলামিক দাওয়া …

সাওম বা রোজা সম্পর্কে আলোচনা

সাওম বা রোজা সিয়াম অর্থ: সিয়ামের আভিধানিক অর্থ হলো: বিরত থাকা। আর শরিয়তের পরিভাষায় অর্থ …

সুরা বালাদ এর দারস

সুরা বালাদ নামকরণ : প্রথম আয়াতে ( আরবী الْبَلَدِ) এর আল বালাদ শব্দটি থেকে সূরার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *